গোটা রাজ্য়ে যখন পুলিশের বিরুদ্ধে শাসক দলের কথায় কাজ করার অভিযোগ তুলে সরব বিরোধীরা, সেখানে উস্থি থানার এই ঘটনা নিঃসন্দেহে ব্য়তিক্রমী।
আরও পড়ুন: মুর্শিদাবাদে শ্য়ুটআউট! পঞ্চায়েত প্রধান নির্বাচনের পরই তৃণমূল নেতাকে গুলি, মৃত্য়ু
উস্থি থানার এই ঘটনার ভিডিও ইতিমধ্য়েই ভাইরাল হয়েছে। ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, পুলিশ কর্তার সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্য় বিনিময়ে জড়িয়ে পড়েছেন তৃণমূল বিধায়ক। শেষ পর্যন্ত অবশ্য় চাপে পড়ে নরম হন তৃণমূল বিধায়ক। থানায় বসেই দাবি করেন, তিনি পুলিশ কর্মীদের খারাপ কোনও কথা বলেননি। উল্টে পুলিশকর্মীদের বিরুদ্ধেই তাঁর সঙ্গে অভব্য় আচরণের অভিযোগ তোলেন তৃণমূল বিধায়ক।
advertisement
গত রবিবার উস্থি থানার ভোলেরহাটে এক বৃদ্ধাকে খুন করার অভিযোগ ওঠে তাঁরই ছেলের বিরুদ্ধে। মাকেই খুন করে সেপটিক ট্য়াঙ্কে দেহ ফেলে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে ছেলে দীপক রায়ের বিরুদ্ধে। অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এই ঘটনায় দিক পরিবর্তন করার চেষ্টা এবং উস্কানিমূলক মন্তব্য়ের জন্য় জয়ন্ত চৌধুরী নামে এক তৃণমূল নেতাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য় আটক করে পুলিশ। এই খবর পেয়েই ওই তৃণমূল নেতাকে ছাড়াতে দলবল নিয়ে থানায় হাজির হন মগরাহাট পশ্চিমের তৃণমূল বিধায়ক গিয়াসউদ্দিন মোল্লা। তখন লাঠি উচিয়ে বিধায়কের অনুগামীদের থানা চত্বর থেকে সরিয়ে দেয় পুলিশ। এর পরেই থানায় গিয়ে পুলিশকর্মীদেরকে হুমকি ও শাসাতে থাকেন বিধায়ক।
খবর পেয়েই থানায় পৌঁছন ডায়মন্ড হারবারের এসডিপিও মিতুন দে। কেন বিধায়ক থানায় ঢুকে অভিযুক্তকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছেন এবং পুলিশ কর্মীদের সঙ্গে অভব্য় আচরণ করছেন, সেই প্রশ্ন তোলেন তিনি। বিধায়ককে যেতে না দিয়ে থানা চত্বরেই বসিয়ে রাখেন তিনি।
ভাইরাল ভিডিও-তে দেখা যাচ্ছে, এসডিপিও-র সঙ্গে রীতিমতো উত্তপ্ত বাক্য় বিনিময় হচ্ছে বিধায়কের। এসডিপিও-কে বলতে শোনা যাচ্ছে, 'কথায় কথায় কেন পুলিশের উর্দি খুলে নেওয়া, বদলি করে দেওয়ার হুমকি দেন আপনি?' পাল্টা বিধায়ক বলেন, 'আমি ভদ্র ঘরের ছেলে, হুমকি দিই না।'
এই কথা কাটাকাটির মধ্য়েই পুলিশকে ছোটলোক, দু' টাকার চাকর বলতে শোনা যায় বিধায়ককে। এরও প্রতিবাদ করেন এসডিপিও। অন্য় এক পুলিশ অফিসার তখন বিধায়ককে বলেন, 'আমি সরকারের বিধায়ক। এটা মাথায় রাখুন।'
বিধায়ক তখন অভিযোগ করেন, তিনি থানায় আসার পর তাঁকে পুলিশকর্মীরা 'ক্রিমিনাল' বলেছেন। পাল্টা এসডিপিও বলেন, 'আপনাকে কেউ ক্রিমিনাল বলেনি। কিন্তু কেউ অপরাধী সমর্থন করলে, ছাড়াতে এলে সেও সমান অপরাধী।'
আরও পড়ুন: অনুব্রতর জামিনের আর্জি খারিজ করল আদালত! কেষ্টকে দিল্লি আনার সম্ভাবনা বাড়ছে?
এই তর্কাতর্কি চলাকালীন তৃণমূলেরই জেলা পরিষদ সদস্য় তন্দ্রা পুরাকাইতও থানায় চলে আসেন। অন্য় একটি ভিডিও-তে দেখা যাচ্ছে, থানার সিঁড়িতে বসে থাকা তৃণমূল বিধায়ককে তন্দ্রাদেবীও বুঝিয়ে বলছেন, নেতা থানায় এলে তার পিছন পিছন অনুগামীরা এসে থানা চত্বরে বিশৃঙ্খলা তৈরি করে। এর জবাবে গিয়াসউদ্দিন মোল্লা ফের দাবি করেন, তিনি কথা প্রসঙ্গেই পুলিশকে দু' টাকার চাকর বলেছেন। কোনও খারাপ কথা বলা তাঁর উদ্দেশ্য় ছিল না।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্য়াপক চাঞ্চল্য় ছড়িয়েছে মগরাহাট এলাকায়। এসডিপিও-র কঠোর মনোভাবের প্রশংসা করছেন প্রত্য়েকেই। যদিও এই ঘটনা নিয়ে প্রতিক্রিয়ার জন্য় একাধিক ফোন করা হলেও গিয়াসউদ্দিন মোল্লার সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে একটি সংবাদমাধ্য়মে তিনি জানিয়েছেন, ঘটনা সম্পর্কে যা বলার দলকেই বলবেন।