প্রতিদিনই একই ছবি পোস্ট অফিস মোড়ে। সকালে লাইন দিয়ে লোকজন দাঁড়িয়ে থাকেন। শালপাতায় একধারে বিশেষ চাটনি সহযোগে পরোটা পরিবেশন করেন সুশান্ত। দু’পিস পরোটার দাম মাত্র ১৬ টাকা। সকালের দিকে অন্তত ৩০ কেজি ময়দার পরোটা বানান সুশান্ত। কী এমন আছে এই পরোটায়, যার জন্য এত আগ্রহ খদ্দেরদের।
আরও পড়ুন: গাছ থেকে পড়েই সব শেষ! কোমর থেকে পা অসাড়, হুইল চেয়ার নিয়েই ম্যারাথনে হাওড়ার যুবক
advertisement
সুশান্তর বক্তব্য, এক বিশেষ ধরনের ভাঁজ দিয়ে বানানো হয় এই পরোটা। যা তিনি দুর্গাপুরের এক যুবকের কাছে শিখেছিলেন। সেটাই এখন তাঁর ‘ট্রেড সিক্রেট’। সেই পরোটার স্বাদ এতই ভাল যে পাঁচজন মিলে দোকান সামলাতে হিমশিম খাওয়ার জোগাড়।
সব খরচপাতি মিটিয়ে সুশান্তর মাসে গড় রোজগার ২০ হাজার টাকা ছাড়িয়ে যায়। দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে বিশেষ ভাঁজের এই পরোটা সাঁইথিয়াবাসীকে খাইয়ে আসছেন সুশান্ত। সুশান্তর অতীত জীবনও অনুপ্রেরণা দেবে অনেককে। সংসারের অভাব ঘোচাতে যখন যা পেয়েছেন সেই কাজই করেছেন।
তারপর তিনি স্থানীয় একটি কাপড়ের দোকানে কাজ নেন। সেই কাপড় দোকানের মালিকই ছিলেন সুশান্তর ‘ভগবান’। তিনিই সুশান্তকে টাকা দিয়ে বলেছিলেন, খাবারের দোকান করতে। যাতে তিনি সাবলম্বী হতে পারেন। কথা বলতে বলতে সুশান্তর মুখে বারবার ফিরে আসছিল ১৪ বছর আগে দোকান খোলার প্রথম দিনটি। কিছুটা আবেগতাড়িত হয়ে পড়েছিলেন তিনি।
বললেন, আমার জীবনে কাপড়ের দোকানের মালিক নরেন্দ্রবাবুর অবদান ভোলার নয়। নানাভাবে সাহায্য করেছেন। আর তারপর থেকে আমি লেগে থেকে ব্যবসাটা দাঁড় করিয়েছি। সংসারের খরচ সামলে পাকা বাড়ি করেছি। দোকানে কাজের জন্য চারজন কর্মী রেখেছি। নিজে হাতে পরোটার ভাঁজ বানাই। বোলপুর, বর্ধমান থেকে সাঁইথিয়ার উপর দিয়ে যাঁরা যান, প্রত্যেকেই নেমে পরোটা খেতে আসেন।
মানুষের ভালোবাসাতে এতদিন ধরে সৎ ভাবে কাজ করে সাঁইথিয়ার বুকে পরোটা পয়েন্ট নাম কুড়োতে পেরেছে। স্থানীয় বাসিন্দা নয়ন সিংহ বলেন, দাম হাতের নাগালে। ফলে সবাই খেতে পারেন। আর সত্যিই সুশান্তর ব্যবহার ও হাতের কাজ দুইই প্রশংসাযোগ্য। তাই ভিড়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হলেও কেউ কিছু মনে করে না। ও অনেক ছোট ব্যবসায়ীর অনুপ্রেরণা বলে মনে করি।
সৌভিক রায়