জয়নগর-মজিলপুর স্টেশনে নেমে কয়েক পা এগোলেই পড়বে পিচ রাস্তা। সেই পিচ রাস্তা ধরে কয়েক পা পরেই ধন্বন্তরী দেবীর মন্দির। স্টেশন থেকে ভ্যানেও মন্দিরে যাওয়া যায়। কথিত আছে, ৪০০ বছরের পুরনো এই মন্দিরে দেবীর স্বপ্নাদেশ থেকে পাওয়া ওষুধ দেওয়া হয়। যা খেয়ে সুস্থ হয়ে যান ভক্তরা। গ্যাস এবং অম্বলের রোগ ঘরে ঘরে। সেই সব রোগ থেকে বহু ভয়ানক রোগের জন্ম হয়। এই সমস্ত রোগ দেবীর স্বপ্নাদেশ পাওয়া ওষুধ খেলে সেরে যায়। সেই কারণেই দেবীর নাম ধন্বন্তরী। যেন তিনি স্বর্গের বৈদ্যরাজ ধন্বন্তরীর মতোই রোগ সারিয়ে দিচ্ছেন। সেকথা মাথায় রেখেই ভক্তরা দেবীকে ডাকেন ধন্বন্তরী নামে।
advertisement
ইতিহাস অনুযায়ী, রাজা প্রতাপাদিত্যের সঙ্গে সম্রাট জাহাঙ্গিরের বিরোধ শুরু হয়েছিল। প্রতাপাদিত্যকে বন্দি করেছিলেন সম্রাট। বন্দি অবস্থায় রাজার মৃত্যু হয়। প্রতাপাদিত্যর বন্ধু ছিলেন শঙ্কর চক্রবর্তী নামে এক ব্রাহ্মণ। রাজার মৃত্যুর পর তিনি বংশরক্ষায় পরিবারের সবাইকে দক্ষিণ যশোরে পাঠিয়ে দেন। আজকে যে জায়গাটির নাম জয়নগর। সেই অঞ্চলটি ছিল দক্ষিণ যশোহরের অন্তর্গত। সে সময় এলাকাজুড়ে জঙ্গল। বাঘ ও নানা ধরনের হিংস্র জন্তুতে ভরা। জনশ্রুতি আছে, তান্ত্রিক ভৈরবানন্দ সেখানে কঠোর তপস্যা করছিলেন। বর্তমানে যেখানে রয়েছে মন্দির, চক্রবর্তীদের এক পূর্বপুরুষ রাজেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ভৈরবানন্দের সন্ধান পেয়ে নেতড়া থেকে এসে পৌঁছন সেখানে। দু’জনের সাক্ষাৎ হয়। রাজেন্দ্রনাথ তাঁর শিষ্য হয়ে যান।
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
ভৈরবানন্দ তাঁকে বলেছিলেন, ‘আমি স্বপ্নাদেশ থেকে জেনেছি আদি গঙ্গায় মা রয়েছেন।’ তারপর বুদ্ধ পূর্ণিমার দিন আদি গঙ্গা থেকে কালীর কষ্টিপাথরের মূর্তি তুলে এনে পর্ণকুটিরে প্রতিষ্ঠা করা হয়। ভৈরবানন্দ পুজোর দায়িত্ব রাজেন্দ্রনাথকে দিয়ে অন্যত্র চলে যান। তারপর বংশ পরম্পরায় চক্রবর্তীরা জয়নগরের পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডে ধন্বন্তরি কালী মন্দিরে পুজো করছেন। কালীকে আরাধ্যা দেবী বলে সাধনা করেছিলেন সাধক ভৈরবানন্দ। তাই মায়ের নাম ধন্বন্তরি। এ বিষয়ে কালিদাস চক্রবর্তী মন্দিরের পুরোহিত তিনি জানান, প্রতিদিনই জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্তরা নিজেদের অসুখ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য ধন্বন্তরি কালী মায়ের মন্দিরে ছুটে আসে। ধন্বন্তরীর কালিমায় স্বপ্নাদেশে পাওয়া ওষুধের ফলে বহু ভক্তরা এবং এলাকাবাসীরা নিজেদের রোগ থেকে পরিত্রাণ পেয়েছে।
লোকোমুখে ধন্বন্তরি মা হিসাবে পরিচয় লাভ এই মন্দিরের। অন্যান্য সময় মায়ের পুজোতে বলিদানের প্রথা না থাকলেও কালী পূজার সময় ছাগ বলির প্রথা রয়েছে। কালী পূজার সময় বিশেষ পুজোর ব্যবস্থা করা হয়। বহু বছর ধরে ভক্তদের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ এবং ব্যাধি নিবারণের জন্য সুপরিচিত। সমীর ঘুরুই নামে এক ভক্ত তিনি জানান, এই কালি মা খুবই জাগ্রত। ভক্তি ভরের মাকে ডাকলে মা ভক্তদের মনবাঞ্ছা পূর্ণ করে। দূরদূরান্ত থেকে মায়ের কাছে ছুটে আসে ভক্তরা। কালীপুজো উপলক্ষে এখন জয়নগরের ধন্বন্তরি কালী মাতার মন্দির সোজো সাজোরব। মন্দির প্রাঙ্গণ নতুনভাবে সেজে উঠছে।