২০২২ সালে জানতে পারেন, তাঁর শরীরের দুটি কিডনি হয়েছে বিকল! এমন পরিস্থিতিতে ছেলের জীবন বাঁচাতে মরিয়া বাবা। নিজের একটি কিডনি দান করার সিদ্ধান্ত নিলেন সন্দীপের বাবা। ‘ছেলেটা বাঁচুক’ -শুধু এটাই চান পেশায় টোটো চালক জগাই দে। যদিও চিন্তা রয়েই গিয়েছে। কিডনি প্রতিস্থাপনের পরেও দু’জনেরই ওষুধ-পথ্যের খরচ অনেকটাই। সেই অর্থ আসবে কোথা থেকে?
advertisement
ছেলে হোঁচট খেয়ে পড়লে বাবাই হাত ধরে তুলে হাঁটতে শেখান। ছোটবেলা থেকে সন্দীপকেও নানা বিপদ-আপদ থেকে আগলে রেখে বড় করে তুলেছেন তারকেশ্বর ব্লকের ট্যাগরা গ্রামের বাসিন্দা জগাই দে। ছেলে ছোট থেকেই মেধাবী। পড়াশোনার পাশাপাশি ছবি আঁকতেও ভালোবাসেন জগাই। উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর আইটিআইতে ভর্তি হন। সঙ্গে চলছে চাকরির পরীক্ষার অনুশীলন। তবে, ভাগ্যের পরিহাসে আজ এক কঠিন সময়ের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে তিনি।
আরও পড়ুন- বৃহস্পতিতে দুই জেলায় ঝেঁপে বৃষ্টি, শীতের স্পেল কবে পাবে কলকাতা-সহ বাংলা? জানুন
২০২২ সালের এপ্রিল মাস। সকালে ভাত খেয়ে কলেজে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন সন্দীপ। আচমকা শুরু হয় বমি। প্রথমে হজমের সমস্যা ভেবে ওষুধ খেয়ে কলেজ চলে যান সন্দীপ। দু’দিন ভাল থাকার পরে ফের শুরু হয় বমি। স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে গিয়ে কিডনির সমস্যা ধরা পড়ে।
পরের মাসে ভেলোরে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন, তাঁর দুটো কিডনিই বিকল। বর্তমানে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে সন্দীপের চিকিৎসা চলছে। সপ্তাহে তিন দিন ডায়ালিসিস করতে হয় তাঁকে। চিকিৎসকেরা খুব শীঘ্রই কিডনি প্রতিস্থাপন করার সময় বেঁধে দিয়েছেন। ‘ডোনার’ না পেয়ে ছেলেকে বাঁচাতে বাবাই কিডনি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
১০ ডিসেম্বর কিডনি প্রতিস্থাপন করা হবে। স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে চিকিৎসা করাতে গিয়ে ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গিয়েছে দু’লক্ষ টাকা। সন্দীপের বাবা বলেন, ‘আগে কাঠের কাজ করতাম। কিন্তু ছেলের অসুস্থতার জন্য সেই কাজ ছেড়ে দিয়েছি। দিন দিন ছেলের শরীর খারাপ হচ্ছে। আমি নিজের কিডনি দিচ্ছি। মুখ্যমন্ত্রী রিলিফ ফান্ডে আবেদন জানিয়েছি। স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে ডায়ালিসিস করতেই দু’লক্ষ টাকা খরচা হয়েছে। কেউ সাহায্য করলে ছেলেটাকে সুস্থ করে তুলতে পারব।’ সন্দীপ বলছেন, ‘আরও কিছুদিন বাঁচতে চাই। স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাই। জানি না, সেটা হবে কি না!’ ছেলের জীবন যুদ্ধে বাবার এই লড়াইকে কুর্নিশ জানিয়েছে প্রতিবেশীরা।
রাহী হালদার