একসময় গ্রাম বাংলায় ভোরবেলায় হরিনাম সংকীর্তনের তরঙ্গ নিয়ে আসত এক অদ্ভুত আমেজ। কার্তিক মাস এলেই গ্রাম বা পাড়া-মহল্লা জুড়ে শোনা যেত এক সুমধুর আহ্বান, ভোরবেলার কৃষ্ণ নাম বা ভোরাই গান। কিন্তু বর্তমানে দ্রুত পরিবর্তনশীল সমাজ ব্যবস্থায়, এই প্রাচীন ঐতিহ্যটি আজ ক্রমশই বিলুপ্তির পথে। এখনও কতিপয় গ্রামে এই পুরনো ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রেখেছেন কয়েকজন। আজও বর্ধমান ২ নং ব্লকের সোনাপলাশি গ্রামে ভোরবেলার শোনা যায় এই টহল বা ভোরাই গান।
advertisement
আরও পড়ুন : বিদ্রোহী কবির ‘অজানা অধ্যায়’ উঠে আসছে বড় পর্দায়, কঠিন লড়াইয়ের গল্প এবার ফাঁস হবে সিনেমায়
মহাদেব বৈরাগ্য বলেন, তিনি পালন করছেন পূর্ব পুরুষদের প্রথা মেনেই। তাঁর বাবা – ঠাকুরদা সকলেই এই কাজ করেছেন। গোটা কার্তিক মাস বা দামোদর মাস জুড়ে গোটা গ্রাম ঘুরে এই কৃষ্ণ নাম গেয়ে বেড়িয়েছেন।কোথাও কোথাও বৈশাখ মাসে এই গান গাওয়া হলেও সোনাপলাশি গ্রামে এই কার্তিক মাস জুড়েই এই গান গাওয়া হয়। ভোর থেকে দিনের আলো ফোটা পর্যন্ত চলে এই গান। ভোর ৩টেে নাগাদ ওঠেন তিনি। কখনও কখনও শরীর খারাপ থাকলে হয়ত ওঠা হয়না। কিন্তু চেষ্টা করেন এই এক মাস ছেদহীনভাবে এই দায়িত্ব পালনের। এই গান গাওয়ার সময় অনেকেই বাড়িতে তাঁকে ডাকেন। যানও। দু-এক কলি গেয়ে আবার চলে আসেন। এই সময় তাঁরা যা দেন, তাই গ্রহণ করেন।
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
তিনি জানিয়েছেন, এখনও গ্রামের মানুষের কাছে ভোরে ওঠা, সূর্য ওঠার আগে দুয়ারে জল দেওয়ার রীতি চলে আসছে। নয়া প্রজন্মের কাছে যার কোনেও গুরুত্ব নেই। সমাজ আধুনিক মোড়কে যতই মুড়ছে, ততই তাঁদের অস্তিত্ব শেষ হয়ে যাচ্ছে। বেশকিছু গ্রামে ভোরাই গানের এই রীতি টিকে থাকলেও বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই জানেন না এই গানের কথা। মহাদেব বৈরাগ্য ও সোনাপলাশি গ্রামের এই উদ্যোগটি যেন পরিবর্তনের যুগে শিকড়কে আঁকড়ে ধরে থাকার এক নীরব সংগ্রাম।





