ঝুলনের থিম ছিল বেশ মজাদার। সেই সময় ছোটদের হিন্দি সিনেমা দেখা অনেক পরিবারেই বারণ ছিল। তবে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে, সিনেমা না দেখেও তারা সিনেমার দৃশ্যপট তৈরি করে ফেলতেন ঝুলনের মধ্যেই। অমিতাভ বচ্চনের বিখ্যাত সিনেমা ‘অনুসন্ধান’। সেই বিখ্যাত ‘ফেটে গেল কালিরামের ঢোল’ গানের দৃশ্যপটও তুলে ধরতেন তাঁরা ঝুলনের মধ্যেই। ভারত-চীন যুদ্ধ থেকে শুরু করে শান্তিপুরে বিখ্যাত তাঁত বোনা, ফুটবল খেলার মাঠ, কিংবা বন জঙ্গলে ঘুরে বেড়াচ্ছে পশু পাখি – ইত্যাদি একাধিক দৃশ্যপঠ তুলে ধরতেন তাঁরা। শান্তিপুরের প্রামানিক বাড়ির বারান্দাতে সেই সময় ঝুলনের আগে ছোট ছোট পুতুল নিয়ে বসতেন ব্যবসায়ীরা। সেখান থেকেই তাঁরা পুতুল কিনে নিয়ে এসে এই সমস্ত দৃশ্যপটগুলি তুলে ধরতেন ঝুলনের মাধ্যমে।
advertisement
আরও পড়ুন : তিলতিল করে গড়ে তুলেছিলেন গ্রামবাসীরা, বর্ষায় সেটাও গেল! কি করবেন, ভেবেই অস্থির মানুষ
তবে পরবর্তীকালে উচ্চশিক্ষা, জীবিকা এবং সংসারে চাপের কারণে ছেলেবেলা এবং ছেলেবেলার শখ দুই ম্লান হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু কথায় বলে, একটা বয়সের পরে পুনরায় মানুষ আবারও বাচ্চা হয়ে যায়। তাঁদের ক্ষেত্রেও ঘটল তাই। নিজেদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এই পুতুল ঝুলনের মর্ম বোঝাতে, ছোটবেলার শখকে পুনরুত্থান করলেন তাঁরা। আর সেই কারণেই রথযাত্রা সময় থেকেই তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন, পুনরায় সেই পুতুল ঝুলন চালু করবেন। পাঁচ দিন ধরে থাকবে এই ঝুলনের দৃশ্যপট। আর তা দেখতেই এখন ভিড় করছেন কচিকাঁচা থেকে যুবক-যুবতী, এমনকি বৃদ্ধ-বৃদ্ধারাও।
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
যদিও, সেসময় পুতুল ঝুলনের কম্পিটিশন লেগে থাকত প্রত্যেক পাড়ায় পাড়ায়। কার দৃশ্যপট কত বেশি নিখুঁত এবং কত প্রাসঙ্গিক, তা দেখতে ভিড় লেগে যেত মানুষের। তবে আজ সর্বসাকুল্যে ঝুলনকে বাঁচিয়ে রাখছেন এই তিনজন মানুষই। ছোটরা তেমন আগ্রহ দেখায় না। কিন্তু আর তাঁদেরকে উৎসাহ জোগাতেই তিন বন্ধুর এই প্রয়াস। স্মৃতি উসকে আবারও এত বছর বাদে এই কুন্ডু বাড়ির বারান্দায় ঝুলন দেখতে পেয়ে এলাকার সেই সময়কার কিশোর কিশোরী, আজ যারা বৃদ্ধ বৃদ্ধা, তাঁরাও খুব পুলকিত।