উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়ার বাসিন্দা শুভজিৎ দাম। তার বাবা কৃষ্ণপদ দাম ছিলেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী। সংসার এক সময় চলত বেশ স্বচ্ছলভাবেই। কিন্তু গত বছরের দুর্গাপুজোর পর হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়েন বাবা। ধরা পড়ে কিডনি ফেলিওর। প্রায় একই সময় মা জয়ন্তী রানী দামেরও হয় দু’দু’বার ব্রেন স্ট্রোক। ভেঙে পড়ে পুরো পরিবার।
advertisement
পরিস্থিতির চাপে বাধ্য হয়ে পড়াশোনা ছাড়ে শুভজিৎ তাই এখন শুরু করেছে ট্রেনে হকারি। বাদাম ঝুরিভাজা নিয়ে তাই এখন সকাল হলেই বেরিয়ে যায়। এক ট্রেন থেকে আরেক ট্রেনে ঘোরে। বিকেলের দিকে ফেরে বাড়ি। কারণ, মা-বাবার ওষুধ খাওয়ার নির্দিষ্ট সময় রয়েছে যে। দিনে গড়ে মাত্র ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা উপার্জন হচ্ছে তার। সেই টাকাই এখন নিয়ে এসে মায়ের হাতে তুলে দিচ্ছে ছেলে। ছেলে কে এমন ভাবে রোজগার করতে হচ্ছে দেখে, যেন বুকফাটা কান্না মায়ের গলায়।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে গিয়ে সাহায্য চাইলেও, তেমন সাড়া মেলেনি বলেই অভিযোগ। পরিবারটিকে কিছুটা ভরসা জুগিয়েছেন আশপাশের মানুষজন ও প্রতিবেশীরা। যতটুকু পেরেছেন, সাহায্য করেছেন তারা। তবে তাতেও দীর্ঘস্থায়ী কোন সমাধান মেলেনি। সরকারি সাহায্যের দিক থেকে পরিবারটি এখন কেবলমাত্র ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’-এর এক হাজার টাকাতেই ভরসা রাখছে। কিন্তু চিকিৎসার খরচ, সংসারের খরচ – সব মিলিয়ে যা আর্থিক পরিস্থিতি তাতে কোনরকম আশার আলোয় আর দেখার ক্ষমতা নেই এই পরিবারের। বাধ্য হয়েই, বাবা-মা নিজেরাই শুভজিৎকে অনুরোধ করেন কিছু উপার্জনের রাস্তা খুঁজতে। তবে এমন পরিস্থিতিতেও যেন খুদে এই পড়ুয়ার মনোবল ভাঙতে পারেনি।
তার চোখে আজও স্বপ্ন, একদিন পড়াশোনায় ফিরবে, আবারও হয়তো গানের অনুষ্ঠানে গাইবে। কিন্তু আজ স্কুলের বন্ধুরা যখন বই খাতা নিয়ে স্কুলে যায়, তখন তাকে বাধ্য হয়েই ট্রেন ধরার তারায় দৌড়াতে হয়। বাবার চলছে ডায়ালিসিস, তাকেও সঙ্গে করে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করাতে হচ্ছে এই ছেলেকেই। সরকার যদি কোন রকম ভাবে একটু বাবাকে সুস্থ করে দেয়, এখন এই একটাই দাবি তার। শুভজিতের এই অবস্থা দেখলে চোখে জল আসবে আপনারও।
Rudra Narayan Roy