শহীদ মাতঙ্গিনী হাজরার নামের সঙ্গে আর একজনের নাম উল্লেখের দাবি রাখে ইতিহাস, তিনি সাবিত্রী বালা দেবী। সাবিত্রী বালা দে। কে এই সাবিত্রী দেবী? কী তাঁর অবদান?
আরও পড়ুনঃ একসময় ছুটে বেড়াতেন, এখন কমেছে কাজ! ব্যস্ততা থেকে দূরে কীভাবে কাটছে ‘রানার’দের দিন?
ইংরেজ পুলিশের গুলিতে সেদিন অসংখ্য দেশপ্রেমিক রক্তাক্ত হয়ে, আহত হয়ে মাটিতে পড়ে একফোঁটা জলের জন্য বুকফাটা কষ্টে কাতরাচ্ছেন, সেই আর্তনাদের খবর পেয়েই স্থানীয় এক গ্রাম্য মহিলা মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে তমলুক থানার কাছে শঙ্করআড়া পোলেতে ছুটে যান। মাটিতে লুটিয়ে পড়ে থাকা আহত, রক্তাক্ত বিপ্লবী দেশপ্রেমিকদের মুখে পরম যত্নে পিপাসার জল তুলে দিয়েছিলেন। নিজেকে নিবেদিত করেছিলেন দেশমাতৃকার সন্তানদের সেবাশুশ্রুষায়। পাশাপাশি আহতদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার বন্দোবস্তও করেছিলেন তিনি। সেই মহিলার নাম সাবিত্রী দেবী।
advertisement
একদিকে তিনি যখন আহতদের সেবাশুশ্রুষা করছেন, তখন ইংরেজের দলদাস পুলিশের দল রাইফেল উঁচিয়ে তাঁকে গুলি করে মেরে ফেলার হুঙ্কার-হুমকি দেয়। ইংরেজ পুলিশ বাহিনী বন্দুক উঁচিয়ে তেড়েও এসেছিল। পালটা সাবিত্রী দেবী বাড়ি থেকে ঝাঁটা ও বঁটি হাতে ইংরেজ বাহিনীর দিকে এগিয়ে যান। তার সঙ্গ দেন আরও অনেক সাহসিনী মহিলা। বঁটি ও ঝাঁটা হাতে ইংরেজ বাহিনীকে ধাওয়া করেন তাঁরা। অকুতোভয় সাবিত্রী দেবীকে সেদিন কেউ দমাতে পারেনি। তাঁর সেই রণংদেহী মূর্তি দেখে ইংরেজ পুলিশ বাহিনীও সেদিন থমকে গিয়েছিল।
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
বীরাঙ্গনা সাবিত্রী দেবী ছিলেন তথাকথিত সমাজচ্যুত এক বারাঙ্গনা নারী। এই ঘটনা সেদিন সারা বাংলা তথা সারা ভারতবর্ষকে বিস্মিত করেছিল- একজন অবহেলিত, অপমানিত, উপেক্ষিত, গ্রাম্য দরিদ্র মহিলা কীভাবে বীরাঙ্গনায় রূপান্তরিত হন- তার প্রামাণ্য নিদর্শন সাবিত্রী দেবী। সেই যুগের বিভিন্ন পত্রপত্রিকাতে এই খবর প্রকাশিত হয়েছিল, যেমন, যুগান্তর, বসুমতী, আনন্দবাজার প্রমুখ পত্রিকা। সেখানে সাবিত্রী দেবীর বীরগাঁথা নিয়ে চারণকবির একটি কবিতাও প্রকাশ হয়। যদিও এহেন বীরাঙ্গনা নারীর শেষ জীবন ছিল অত্যন্ত কষ্টের। চরম দারিদ্রের মধ্যে দিয়ে কাটে তাঁর জীবন। সবশেষে সবার আড়ালে থাকা সেই বীরাঙ্গনা নারী ১৯৯২ সালে নীরবে চলে যান।