হাওড়া জেলার প্রান্তিক গ্রাম পাঁচলা ব্লকের অন্তর্গত গঙ্গাধরপুর। মাত্র কয়েক দশক আগেও জেলার অধিকাংশ মানুষের কাছে একটি অজানা গ্রাম। সেভাবে পরিচিত লাভের সেরকম কোন দিকই ছিল না এই গ্রামে। খুব সাধারন একটা গ্রাম, যে গ্রামের অধিকাংশ মানুষ কৃষি কাজ ও শ্রমিক শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। সে সময় গ্রামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বলতে প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষালাভ। গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র গিয়ে শিক্ষাগ্রহণ করতে সুযোগ ছিলনা অধিকাংশ পরিবারে। তাই এই গ্রাম শিক্ষার দিক থেকে পার্শ্ববর্তী গ্রামের থেকে অনেকটা পিছিয়ে। তবে গ্রামের গুটি কয়েক মানুষ শিক্ষিত হয়েছেন। তারাও বিভিন্নভাবে গ্রামকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। গ্রামের মানুষকে শিক্ষিত করতে সকলেই কম বেশি উদ্যোগ নিয়েছেন। তবে তাদের থেকে ভিন্ন চিন্তা গ্রহণ করেন সন্তোষ কুমার দাস।
advertisement
তিনি মনে করেন দেশ ও দশ তথা গ্রামের উন্নতির মূল চাবিকাঠি শিক্ষা। অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া গ্রামের মানুষকে স্বল্প খরচের শিক্ষা পেতে, তিনি চিন্তা করেন গ্রামেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ার। বহু বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। সমস্ত বাধা-বিপত্তি কাটিয়ে গ্রামের মানুষ ও সরকারি সহযোগিতায় সেই চেষ্টা সফলতা পায়। তারপর কয়েক বছর অন্তর অন্তর একের পর এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।
১৯৬৪ সালে গঙ্গাধরপুর বিদ্যামন্দির স্কুল প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ার সূচনা করেন শিক্ষাবিদ সন্তোষ কুমার দাস। তারপর স্কুলকে উচ্চমাধ্যমিকে পরিণত করা, এরপর আরও একটি মহিলা অর্থাৎ গার্লস স্কুলের প্রতিষ্ঠা। দুটি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের পর তিনি প্রাথমিক স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর তিনি উপলব্ধি করেন কলেজে পড়তে গ্রামের ছেলেমেয়েদের পার্শ্ববর্তী ব্লক অথবা হাওড়া শহরে যেতে হয়। তাই তিনি ডিগ্রী কলেজ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগী হন। অল্প দিনে সেই উদ্যোগে সফল হন। গঙ্গাধরপুর মহাবিদ্যামন্দির, গঙ্গাধরপুর বালিকা বিদ্যামন্দির, গঙ্গাধরপুর বিদ্যামন্দির প্রাথমিক বিদ্যালয়, এরপর গঙ্গাধরপুর মহাবিদ্যা মন্দির অর্থাৎ কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। এখানেই থেমে যাননি। উচ্চশিক্ষার জন্য ছেলেমেয়েদের কলকাতা অথবা রাজ্যের বাইরে যেতে হয় তাই তিনি বি এড, ডি এড, ও এম এড শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়েন। এবার তিনি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার লক্ষ্যে।
যে গ্রামের মানুষকে সামান্য স্কুল পর্যায়ের লেখাপড়া করতে অন্য গ্রামে যেতে হত। এখন সেই গামেতেই উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শিক্ষার্থীরা হাজির হচ্ছে। একসময় যে গ্রামে মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিক পাশ ছেলে মেয়ে হাতে গনা যেত, খুঁজলে বহু কষ্টে স্কুল পাশ করার ছেলে মেয়ে মিলত। এখন সেই গ্রামেই প্রতি ঘরে ঘরে উচ্চশিক্ষিত ছেলে মেয়ে। শিক্ষাবিদ তথা প্রাক্তন বিধায়ক সন্তোষ কুমার দাসের হাত ধরেই শিক্ষা লাভের পিঠস্থান হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে হাওড়া জেলার গঙ্গাধরপুর গ্রাম। পার্শ্ববর্তী গ্রাম ও জেলার মানুষের কাছে শিক্ষার দিক থেকে সুপরিচিত এই গ্রাম। এখানে শিক্ষার্থীদের সুবিধার পাশাপাশি বহু মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে এই মানুষটির হাত ধরেই।





