এই প্রসঙ্গে সনৎ কুমার মণ্ডল বলেন, “আমি একটা ব্যবসা করি আর ব্যবসা মানেই সব সময় বসে থাকা। বসে থাকলেই রোগ হবে। তাই আমি চিন্তাভাবনা করলাম, এমন একটা কাজ করব যেটা এই মুহূর্তে পৃথিবীর সবথেকে বেশি প্রয়োজন। আমার নিজের হাঁটাচলাও হবে আবার পরিবেশের কাজও করতে পারব। কারণ পরিবেশ পরিষ্কার রাখা এখন সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এই চিন্তাভাবনা নিয়েই আমি কাজ শুরু করেছি।”
advertisement
আরও পড়ুন: ভাগীরথীর জলে সাঁতার কাটছে আস্ত কুমির! দেখেই সেই পুরাতন আতঙ্ক ফিরল কালনায়
পূর্বস্থলী দুই ব্লকের ধারাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সনৎ কুমার মণ্ডল। বাবা, মা, স্ত্রী, দুই মেয়ে এবং ভাইয়ের স্ত্রী সন্তান নিয়ে ভরা সংসার সনৎ এর। তাঁর নিজের একটা ছোট্টো কাঁসা পিতল, ফার্নিচার এবং হার্ডওয়্যারের দোকান রয়েছে। এই দোকানই তাঁর রুজি রুটির একমাত্র ভরসা। তবে ব্যবসা সামলানোর পাশাপাশি তিনি ভালবেসে এই কাজ করেন। ভোর হলেই স্কুটি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন রাস্তা পরিষ্কারের উদ্দেশ্যে। সঙ্গে থাকে দুটো বড় ঝাঁটা, হাতে গ্লাভস এবং মুখে বাঁধা থাকে কালো মাস্ক। ভোর থেকে শুরু করে সকাল আটটা পর্যন্ত তিনি এই কাজ চালিয়ে যান।
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
সকালের দিকে রাস্তায় অনেকেই সনৎ বাবুকে দেখে হয়ত ভাবেন যে তিনি সাফাইকর্মী। তবে আসল সত্যি এই মানুষটা সমাজকে ভালবেসে নিজের দেশকে ভালবেসে পাগলের মত এই কাজ করেন বিনা পারিশ্রমিকে। উল্টে রাস্তা পরিষ্কার করতে গিয়ে তাঁর নিজের পকেট থেকেই টাকা খরচ হয়। তিনি তাঁর স্কুটিতে রাখেন চকলেট এবং বিস্কুট। যেগুলো প্রত্যেকদিন তিনি রাস্তা পরিষ্কারের সময় ছোট বাচ্চা এবং দুঃস্থ মানুষদের উপহার দেন। এই প্রসঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দা পরিতোষ ঘোষ বলেন, “ওর ছুটি নেই, ছোট থেকেই ওকে দেখে আসছি এই কাজ ও বিনা পারিশ্রমিকে নিঃস্বার্থভাবে করে আসছে। সমাজে এরকম মানুষের আরও প্রয়োজন রয়েছে।”
সনৎ এই কাজ প্রথম শুরু করেছিলেন ২০১৪ সাল থেকে। তবে প্রথম দিকে পরিবারের তরফ থেকেও বাঁধা এসেছিল। তাঁকে শুনতে হয়েছিল যে ঘরের খেয়ে তিনি বনের মোষ তাড়াতে যাচ্ছেন। পাড়া প্রতিবেশীরাও কটূক্তি, মজা, খিল্লি করেছিল। তবে কাউকে পরোয়া না করে এখনও পর্যন্ত একটানা তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন রাস্তা পরিষ্কারের কাজ। এখন পরিবার তো দূরের কথা, হাজারও মানুষ সনৎকে নিয়ে গর্ব অনুভব করেন। সনৎ বাবু জানিয়েছেন আগামী দিনেও তিনি এই কাজ চালিয়ে যাবেন। সবমিলিয়ে নিঃস্বার্থ ভাবে দেশের কথা ভেবে পূর্ব বর্ধমানের সনৎ এর নেওয়া এহেন উদ্যোগ সত্যিই অভিনব।
বনোয়ারীলাল চৌধুরী