২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও সাগরদিঘিতে ৫০ হাজারের বেশি ব্যবধানে জয়ী হয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী সুব্রত সাহা৷ ভোট গণনার ফল বলছে, এবার সেই সাগরদিঘিতেই তৃণমূল প্রার্থী দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের থেকে ২১ হাজারের বেশি ভোটে এগিয়ে গিয়েছেন কংগ্রেস প্রার্থী বায়রন বিশ্বাস৷ বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী পেয়েছেন ৪৪ শতাংশ ভোট৷ সেখানে তৃণমূল প্রার্থী পেয়েছেন ৩৯ শতাংশ ভোট৷
advertisement
আরও পড়ুন: ত্রিপুরায় সরকার গড়ার পথে বিজেপি, মেঘালয়ে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার পথে NPP
পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে সাগরদিঘিতে এই পরাজয় নিঃসন্দেহে তৃণমূল নেতৃত্বের চিন্তা বাড়াবে৷ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, শুধু বাম-কংগ্রেস জোটের সাফল্য নয়৷ তৃণমূলের আরও বেশি চিন্তা বাড়াবে সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কে ধস৷ কেন সাগরদিঘি চিন্তা বাড়াবে শাসক দলের?
প্রথমত, বাম-কংগ্রেস জোটের এই সাফল্য পঞ্চায়েত ভোটের আগে দুই দলেরই নিচুতলার কর্মীদের মনোবল অনেকটা বাড়াবে৷ পঞ্চায়েতে নিচুতলায় অলিখিত জোট নতুন কিছু নয়৷ বাম কংগ্রেস জোটের এই সাফল্য তাই পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে শাসক দলকে প্রতিরোধ করতে বিরোধীদের একত্রিত করতে আরও উৎসাহিত করবে বলেই মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের৷ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরীও বলেছেন, সাগরদিঘির এই জয় গোটা বাংলায় ট্রিগারের কাজ করবে৷
দ্বিতীয়ত, এতদিন সংখ্যালঘু ভোট ব্যাঙ্ক ছিল তৃণমূলের বড় শক্তি৷ ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও মালদহ, মুর্শিদাবাদের মতো কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটিগুলিতে তৃণমূলের একচেটিয়া সাফল্যের বড় কারণ ছিল সংখ্যালঘুদের বিপুল সমর্থন৷ সাগরদিঘি বিধানসভা কেন্দ্রেও প্রায় ৬৮ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোট রয়েছে৷ এই সংখ্যালঘু ভোটে যে এবার বাম-কংগ্রেস জোট থাবা বসাতে পেরেছে, তা উপনির্বাচনের ফলাফল দেখে নিশ্চিত ভাবেই বলা যায়৷ এই প্রবণতা পঞ্চায়েত নির্বাচন এবং পরবর্তী সময়ে বজায় থাকলে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের ক্ষেত্রেও অনেক হিসেব নিকেশ উল্টে যেতে পারে৷
আরও পড়ুন: 'আমি মীরজাফর নই', সাগরদিঘির যুদ্ধ জিতেই ফুঁসলেন অধীর! নিশানায় মমতা
তৃতীয়ত, সাগরদিঘি নির্বাচনের হারের পিছনে দলের অন্তর্কলহ কতখানি দায়ী, তাও খতিয়ে দেখতে হবে তৃণমূল নেতৃত্বকে৷ উপনির্বাচনের শুরু থেকেই তৃণমূলেরই একাংশ থেকে সাগরদিঘির প্রার্থী নিয়ে ক্ষোভ ছিল৷ অভিযোগ ছিল, ২০২১ সালের নির্বাচনে বিজেপি-কে সাহায্য করেছিলেন দেবাশিস ভট্টাচার্য৷ এ বারের উপনির্বাচনেও প্রয়াত মন্ত্রী সুব্রত সাহার অনুগামীদের কোণঠাসা করে রাখা হয়েছিল বলেই অভিযোগ৷ ফলে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব যতই বলুন না কেন, সাগরদিঘির হারের পর গোষ্ঠী কোন্দল তৃণমূলের চিন্তা বাড়াবেই৷ ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনেও তৃণমূলের মাথাব্যথা ছিল এই অন্তর্কলহ এবং প্রার্থী নিয়ে অসন্তোষ৷
চতুর্থত, এসএসসি, প্রাথমিক নিয়োগে দুর্নীতি, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অনুব্রত মণ্ডল, মানিক ভট্টাচার্যের মতো শাসক দলের প্রথমসারির নেতা, মন্ত্রী বিধায়কদের গ্রেফতারির পর সাগরদিঘিতেই ছিলে প্রথম বড় কোনও নির্বাচন৷ আর সেখানেই ধাক্কা খেল তৃণমূলের বিজয়রথ৷ ফলে দুর্নীতির অভিযোগের কাঁটা শাসক দলের পায়ে বিঁধতে শুরু করল কি না, সেই প্রশ্নও তুলে দিল এই উপনির্বাচন৷
শুধু তৃণমূল নয়, সাগরদিঘির উপনির্বাচনের ফল বিজেপি-র কাছেও বড় ধাক্কা৷ ২০২১ সালেও এই সাগরদিঘিতে বিজেপি ২৪ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছিল৷ তার বড় কারণ, হিন্দু ভোটের মেরুকরণ৷ এই অঙ্কেই ২০২১-এ সাফল্য পেয়েছিল বিজেপি৷ কিন্তু এবার সাগরদিঘিতে বিজেপি-র প্রাপ্ত ভোটের হার নেমে গিয়েছে ১২ শতাংশে৷ মাত্র বছর দুয়েক আগে প্রাপ্ত ভোট কেন অর্ধেক হয়ে গেল, তা পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে বিজেপি নেতাদের ভাবাতে বাধ্য৷ কারণ ২০২১-এর পর একের পর এক বিজেপি-র বিধায়ক যেমন দল ছেড়েছে, তেমনই পরের পর নির্বাচনে বাংলায় নির্বাচনে গেরুয়া শিবিরের প্রাপ্ত ভোটের হার কমেছে৷ সাগরদিঘিতেও তা অব্যাহত থাকল৷