চন্দননগর কলেজের অধ্যক্ষ দেবাশিষ সরকার জানান, চন্দননগরের অনেক ইতিহাস। সুলতানদের থেকে ফরাসীদের হাতে, বৃটিশ ফরসীদের সংঘাত হওয়া, পরবর্তী অবস্থায় ফরসীদের সঙ্গে সেটেলমেন্ট, তারপর তাদের চলে যাওয়া এবং ভারতবর্ষের সঙ্গে যুক্ত হওয়া। এই ইতিহাস তার ছত্রে ছত্রে হেরিটেজের স্বাদ রয়েছে। কিন্তু এর রক্ষণাবেক্ষণ পরিকল্পনা মাফিক হয়ে ওঠেনি। চন্দননগর হেরিটেজ গবেষণা কেন্দ্রের উদ্দেশ্যই হবে যা হারিয়ে গেছে তার জন্য আক্ষেপ না করে যা আছে তাকে সংগ্রহ করা এবং রক্ষা করা।
advertisement
আরও পড়ুন: পৃথিবীর সর্বোচ্চ আগ্নেয়গিরি জয় করলেন উত্তরপাড়ার যুবক! প্রথম বাঙালি তিনি, গর্বের মুহূর্ত!
একাডেমিক রিসার্চ ওয়ার্কের কথা মাথায় রেখে তিন বছর আগে পথচলা শুরু হয়েছিল। এই কারণে তিনটি বই প্রকাশ। গত বছর চন্দননগর কলেজের নিজস্ব ইতিহাস ও বিবর্তন সম্পর্কিত একটি বই – College Dupleix to Chandernagore College: The Journey from Revolution to Emancipation প্রকাশিত হয়েছিল। এই শহরের বিশিষ্ট ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কিত গবেষণার সেই ধারা অনুসারেই এ বছর ও দুটি পৃথক বই প্রকাশিত হয়েছে। প্রথম গ্রন্থটির নাম ‘Chandernagore –A City of Heritage’ দেবাশিস সরকার, অবিন চক্রবর্তী, সৈকত নিয়োগী ও সৌম্যব্রত দাসগুপ্ত লিখিত এই বইটি চন্দননগরের বর্ণময়, অদ্বিতীয় ইতিহাস ও বহুমুখী ঐতিহ্যের এক সামগ্রিক পর্যালোচনা।
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
ফরাসী উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা, ভাগীরথীর পাড়ে ইঙ্গ-ফরাসী শক্তির পারস্পরিক প্রতিযোগিতা, পরবর্তীকালে উনবিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে দীর্ঘ ফরাসী শাসন, বিংশ শতাব্দীর সূচনাকাল থেকে বিকশিত বিপ্লবী সংগ্রাম, গণভোটের মাধ্যমে ফরাসী শাসন থেকে মুক্তি ও ভারতের সাথে সংযুক্তি – এই অনন্য ও বহুমাত্রিক ইতিহাসের নানা প্রামাণ্য দলিল ও সরকারী দস্তাবেজের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছে এই বইটি। একইসাথে রয়েছে এই শহরের বিপ্লবী আদর্শে সিঞ্চিত রাজনৈতিক ঐতিহ্য, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহ, এখানকার বয়নশিল্প, মিষ্টান্ন শিল্প, আলোকশিল্প, জগদ্ধাত্রী পূজা, নাটক, গান, যাত্রা, কীর্তন, কবিগান, স্থাপত্য – ইত্যাদি সম্পর্কিত তথ্যপূর্ণ সচিত্র আলোচনা।
বস্তুত চন্দননগর কলেজের বিবর্তনের যে ইতিহাস তা এই শহরের ইতিহাসের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে যুক্ত। সেই ইতিহাসই জীবন্ত হয়ে ওঠে দ্বিতীয় বইটির মাধ্যমে যার নাম ‘মম হেরিটেজ’ চন্দননগর কলেজ। ফরাসী পাদ্রিদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় কীভাবে একটি উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠল এবং তারপর ছাত্র-শিক্ষকদের বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের নিরিখে ২৩ বছর বন্ধ থাকার পর আবার ক্রমিক অগ্রগতির পথে এগিয়ে চলল, সেই রোমাঞ্চকর পাকদণ্ডীর এক সংক্ষিপ্ত পরিক্রমা এই বইটি।
এ প্রসঙ্গে বিশেষভাবে উল্লেখ্য সাম্প্রতিক কিছু বছরের পুনর্গঠন ও সংস্কারের ইতিহাস যার ফলে একদিকে যেমন এই সরকারী কলেজ কেন্দ্রীয় বিচারে ন্যাক এর তরফ থেকে A+ গ্রেড পেয়েছে, তেমনই কলেজের ঐতিহ্যবাহী ভবনে সশস্ত্র বিপ্লবীদের স্মৃতির প্রতি উৎসর্গীকৃত একটি সংগ্রহশালাও গড়ে উঠেছে যা ইতিমধ্যেই দেশী-বিদেশী পর্যটকদের দ্বারা সমাদৃত হয়েছে। আত্মকথার আদলে লিখিত এই বইটি একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্রমবিকাশ ও অগ্রগতির এই অসামান্য আখ্যানকেই সাধারন পাঠকের সামনে উপস্থাপন করে।
২০২৫ সাল চন্দননগরের ফরাসী শাসনমুক্তির ৭৫তম বর্ষ। এই উপলক্ষ্যে আজ চন্দননগর কলেজেরই ঐতিহ্যবাহী ভবনের আলোচনাকক্ষে চন্দননগর কলেজ এবং চন্দননগর কলেজের প্রাক্তনী সংসদ একটি সভার আয়োজন করে। যেখানে উপস্থিত ছিলেন চন্দননগরের মেয়র রাম চক্রবর্তী ডেপুটি মেয়র মুন্না আগরওয়ালের হাতে। এই বই দুটি তুলে দেওয়া হয়। উপস্থিত ছিলেন চন্দননগর কলেজের অধ্যক্ষ দেবাশিষ সরকার, প্রাক্তনী সংসদের সম্পাদক দীপ্তনারায়ন মুখার্জি। অধ্যক্ষ বলেন, “আমরা এটাকে আন্দোলনের আকারে শহরের মানুষের কাছে নিয়ে যেতে চাই। শুধু কলেজের কয়েকজনের কাজ নয়। নাগরিক সমাজকে যুক্ত করে তাদের চিন্তা চেতনাকে যুক্ত করে ঐতিহ্য মানে হেরিটেজ রক্ষা করাই হচ্ছে এই গবেষণা কেন্দ্রের মূল লক্ষ্য।”
রাহী হালদার





