গ্রামের মাঝে সামনে ফাঁকা জমির ওপর বিশালাকার প্রাসাদ । অনুপম এই অট্টালিকা সংস্কারের অভাবে জীর্ণ । দেওয়ালের ফাঁক দিয়ে আকাশ ছুঁতে চাইছে বট অশ্বত্থ । এটাই রাসবিহারী ঘোষের বাড়ি । এই বাড়িতেই দুর্গাপুজো শুরু করেছিলেন তিনি । ঢাকের বাদ্যি শুনে ছুটে আসতেন গ্রামবাসীরা । অকাতরে নতুন পোশাক দরিদ্র গ্রামবাসীদের হাতে তুলে দিতেন দানবীর রাসবিহারী । আজও গ্রামে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে তাঁদের পরিবারের জমি, পুকুর। বাসিন্দারা চান, সেসব নিয়ে রাসবিহারীর বাড়ি সংস্কার করুক সরকার। সেই বাড়ির সামনে বেজে উঠুক ঢাক। আলোয় আলোয় সেজে উঠুক প্রতিটি খিলান। বারোয়ারিতলা থেকে রাসবিহারীর বাড়িতে ফিরে আসুক দুর্গাপুজো। এমনটাই চাইছেন বাসিন্দারা।
advertisement
১৮৪৫ খ্রিস্টাব্দে পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষের তোড়কোনা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আইনজ্ঞ তথা দানবীর স্যর রাসবিহারী ঘোষ। গ্রামের পড়াশোনা শেষ করে তিনি বাঁকুড়া হাই স্কুল থেকে এন্ট্রান্স ও কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন। ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দে এমএ পরীক্ষায় ইংরেজিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। স্বর্ণপদক-সহ আইন পাশ করে তিনি অধ্যাপনা শুরু করেন। ১৮৮৪ সালে ডক্টরস অব ল’ ডিগ্রিতে সম্মানিত হন।
আরও পড়ুন : বিশ্বের শুষ্কতম মরু চিলির আটাকামায় রংবাহারি ফুলের মেলা, দেখুন প্রকৃতির বিস্ময়ের ছবি
রাসবিহারী ঘোষ দু দুবার জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯১৫ সালে নাইট উপাধি লাভ করেন। দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনেও বিশেষ ভূমিকা পালন করেন রাসবিহারী ঘোষ। অকাতরে দানের জন্য তিনি দানবীর হিসেবে পরিচিতি পান। দেশ ও সমাজ গঠনে মুক্ত হস্তে দান করেছিলেন তিনি। ১৯১৩ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য দশ লক্ষ টাকা দান করেন তিনি। যাদবপুরে ন্যাশনাল কাউন্সিল অব এডুকেশন এনসিই তৈরির জন্য দান করেছিলেন ১৩ লক্ষ টাকা। পরে তা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় রূপে গড়ে ওঠে। নিজের গ্রামে স্কুল ও হাসপাতাল তৈরি করেছিলেন তিনি। কলকাতার রাসবিহারী অ্য়াভিনিউয়ের নামকরণ তাঁরই নামে।
তাঁর অবদান ভোলেনি গ্রাম। তাই তাঁর প্রতিষ্ঠিত দুর্গাপুজোকে আপন করে নিয়েছেন তাঁরা। আক্ষেপ একটাই। আজও সংষ্কার হল না রাসবিহারীর জন্মভিটে ও বসতবাড়ির।
