কাটোয়া শহরের শ্মশান পেরিয়ে একদম ভাগীরথীর কিনারায় রয়েছে তাঁর ছোট্ট চায়ের দোকান। শহরের অধিকাংশ মানুষ তাঁকে রাজুদা নামেই চেনেন। তাছাড়া রাজুর চায়েরও একটা আলাদা খ্যাতি রয়েছে শহরে। রাজুর চায়ের দোকানে সকাল বিকাল ভিড় জমান বহু মানুষ। বেশিরভাগ সময় নিজের এই চা দোকান নিয়েই ব্যস্ত থাকেন তিনি। তবে হঠাৎ কেউ বিপদে পড়লেই ডাক পড়ে তাঁর।
advertisement
কাটোয়ার এই ভাগীরথীতে স্নান করতে আসেন বহু মানুষ। তবে বিভিন্ন সময় জলে নেমে কেউ বিপদে পড়লেই রাজু তাঁর জন্য বাজি রাখেন নিজের জীবন। নদীতে কাউকে ডুবে যেতে দেখলে বা কোনও কারণে কেউ যদি তলিয়ে যেতে থাকে তখন তার প্রাণ রক্ষার জন্য সাধ্যমতো চেষ্টা করেন চা বিক্রেতা রাজু।
আরও পড়ুন- শৈশবে পিতৃহীন, মা গৃহশিক্ষিকা, প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে WBCS-এ প্রথম অভাবী পরিবারের প্রিয়তোষ
এখনও পর্যন্ত একাধিক মানুষের জীবন বাঁচিয়েছেন কাটোয়ার রাজুদা। রাজু এই প্রসঙ্গে বলেন, “গঙ্গার ধারে আমার বাড়ি, ছোট থেকেই নদীতে সাঁতার শিখেছি। এখানে কখনও কেউ পড়ে গেলে বা ভেসে গেলে আমি আমার মতো করে ছুটে গিয়ে জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করি। আর এটা আমি নিঃস্বার্থভাবেই করি।”
রাজু দার কথায়, অন্যকে জলে ডুবে যেতে দেখলে তখন তাঁর নিজের জীবনের কথা মাথায় থাকে না। তাঁরও যে বিপদ ঘটতে পারে সেসব নিয়ে কোনও চিন্তায় নেই। পরিবারের লোকেরাও তাঁকে অনেকবার সচেতন করেছেন। তবে রাজুদা সেসব কথায় কান না দিয়ে নিঃস্বার্থভাবে চালিয়ে যান অন্যের জীবন বাঁচানোর কাজ।
একবার বর্ধমান থেকে এক মা ও ছেলে এই নদীতে স্নান করতে এসেছিলেন। তখন হঠাৎ সেই ছেলে নদীতে ভেসে গেলে মা ছেলেকে বাঁচানোর জন্য ঝাঁপ দেয় নদীতে। পরবর্তীতে মায়েরও নদীতে ডুবে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। সেই সময় চায়ের দোকান ছেড়ে নদীতে নেমে মা, ছেলে দুজনেরই প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন রাজুদা।
কিছুদিন আগে কাটোয়া শহরেরই একটি অল্পবয়সী ছেলের জীবন বাঁচিয়েছেন তিনি। এরকম আরও অনেকেরই প্রাণ রক্ষা করেছেন রাজুদা। তবে কিছু স্থানীয় মানুষ ছাড়া এখনও অনেকেই জানেন না কাটোয়ার রাজুর এই মহৎ কাজের কথা। স্থানীয় টোটোচালক বিপ্লব রায় বলেন, “রাজুর এমন মহৎ কাজ সত্যিই করে, এটা সত্যি ঘটনা। আমাদেরও গর্ব হয় ওঁর এই কাজের জন্য। অনেকের প্রাণ বাঁচিয়েছে।” রাজু জানিয়েছেন, তিনি আগামী দিনেও এই ধরনের কাজ চালিয়ে যাবেন। তবে তিনি মোটা দড়ি এবং একটা লাইফ জ্যাকেটের জন্য সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন। এই সামান্য কিছু জিনিস তাঁর কাছে থাকলে উদ্ধারকার্যে অনেকটাই সাহায্য হবে। কাটোয়া পৌরসভার চেয়ারম্যান সমীর কুমার সাহা বলেন, “সবাই এইরকম কাজে এগিয়ে আসে না, এটা সমাজের কল্যাণমূলক কাজ। এটা যদি সত্যি হয় তাহলে আমাদের কাছে সত্যিই গর্বের বিষয়। রাজু ভাল থাকুক ও খুব ভাল কাজ করছে। আগামী দিনে রাজুর নাম যাতে ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্টে পাঠানো যায় সেই বিষয়ে চেষ্টা করব।”
বনোয়ারীলাল চৌধুরী