আরও পড়ুন: শিশুদের নিয়ে কাজ, জেলায় সরকারি চাকরির দারুণ সুযোগ! এখনই আবেদন জানান
একটি আস্ত স্টেশন গড়ার কারিগর এলাকারই যুবক অচিন্ত্য। স্টেশন গড়ে তোলার পিছনে নিজের নাম এবং লড়াই যেন স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতন ১ ব্লকের আঙ্গুয়া এলাকার বাসিন্দা তিনি। যিনি কলেজে পড়াকালীন ভারতীয় রেলওয়ে বিভাগে চতুর্থ শ্রেণীর পদে অস্থায়ী কাজে নিযুক্ত হয়েছিলেন। তবে নিজের দক্ষতা এবং কর্ম ক্ষমতায় শেষ পর্যন্ত প্রথম শ্রেণীর এক অফিসার পদে নিযুক্ত হন। রেলের ভরসার এবং প্রিয় আধিকারিক হয়ে উঠেছিলেন অচিন্ত্য দাস।১৯৫৬ সাল থেকে অচিন্ত্য শুরু করেন রেলওয়ে বিভাগে কাজ। প্রথমে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মী হিসেবে যোগদান করলেও পরে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। একাধিক পদ বদল হয়েছে, হয়েছে পদোন্নতি। কাজ অন্ত প্রাণ অচিন্ত্য ছিলেন রেলের খুব প্রিয়ভাজন। কাজে সততা মুগ্ধ করেছিল রেলওয়ে বোর্ডকে। তবে নিজের কর্ম জীবনে তার জন্মস্থানের কাছেই স্টেশন গড়ে তোলার সঙ্গে নিজের নাম জুড়েছেন।
advertisement
ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, আজ থেকে বেশ কয়েকটা বছর আগে তিনি এলাকা স্টেশন গড়ে তোলার প্রয়োজন বোধ করেন। বাংলার দাঁতন এবং ওড়িশার লক্ষণনাথ স্টেশনের মধ্যে দূরত্ব প্রায় ১০ কিলোমিটার। এর মাঝে কোনও স্টেশন ছিল না। এলাকার প্রায় ১০ থেকে ১২ টি গ্রামের মানুষকে ট্রেন যোগাযোগের সঙ্গে একাত্ম করতে চলে আন্দোলন, করেছেন সই সংগ্রহের কাজ। আঙ্গুয়াতে স্টেশন গড়ে তুলতে দিল্লি অবধি দরবার করেছেন তিনি। অবশেষে সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে তার আন্দোলন সফল হয়। ১৯৮৪ সাল নাগাদ শুরু হওয়া আন্দোলন সফলতা পায় ১৯৮৮ সালে। গড়ে উঠে হল্ট স্টেশন। প্রথমে দিকে ট্রেন না থাকলেও বর্তমানে পাঁচ জোড়া আপ এবং ডাউন লোকাল ট্রেন থামে, থামে বাঘাযতীন এক্সপ্রেসও।
এলাকার স্টেশন গড়ে ওঠায় একদিকে যেমন যাতায়াতের উন্নতি হয়েছে তেমনি গ্রামের আর্থসামাজিক ক্ষেত্রেও উন্নতি ঘটেছে। অনেকের দাবি এই হল স্টেশন একদিন পূর্ণ স্টেশনের মর্যাদা পাবে। দীর্ঘদিন রেলের সঙ্গে কাজ করার সুবাদে আবেগ ছড়িয়েছিল তার, আইনে পড়াশোনা করার কারণে রেলের যাবতীয় মামলা বিনা পারিশ্রমিককে লড়ে দিতেন। তাই রেলের কাছে অত্যন্ত প্রিয় হয়ে উঠেছিলেন গ্রামের ছেলে অচিন্ত্য। আস্ত একটি একটি স্টেশনের জন্ম দেওয়া অচিন্ত্যের মৃত্যু হয় ২০১৪ সালে। তবে গোটা গ্রাম মনে রেখেছে তাকে। যার ব্যক্তিগত এবং একান্ত উদ্যোগে একটি স্টেশন গড়ে ওঠে এলাকায়, গড়ে তোলে রেলওয়ে বোর্ড। স্বাভাবিকভাবে রেলের ইতিহাসে এক অনন্য নজির এটি।