বিশ্বভারতী সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯১৭ সালের ৮ জানুয়ারি আমেরিকার নেব্রাস্কা স্টেটের লিঙ্কন শহরে অলিভার থিয়েটারে রবীন্দ্রনাথের বক্তব্যের বিষয় ছিল ‘ন্যাশনালিজম’ বা জাতীয়তাবাদ। ওই দিনই লিঙ্কনের বাসিন্দারা রবীন্দ্রনাথকে একটি মুদ্রণযন্ত্র উপহার দেন। নাম ‘দ্য লিঙ্কন প্রেস’। উপহারটি মূলত ছিল শান্তিনিকেতনের ছাত্রদের জন্য। যন্ত্রটির গায়ে ধাতুর পাতে খোদাই করা ছিল, ‘প্রেজেন্টেড টু দ্য বয়েজ় অব শান্তিনিকেতন’। ১৯১৮-র অক্টোবরে প্রকাশিত হয় শান্তিনিকেতন প্রেসে মুদ্রিত প্রথম বই- রবীন্দ্রনাথের গানের দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের করা স্বরলিপি-সহ সংকলন ‘গীত-পঞ্চাশিকাট। তার পরে বহু ইতিহাসের সাক্ষী এই প্রেস।কেন্দ্রীয় শিক্ষা দফতর সাতটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে তাদের নিজেদের প্রেস বা ছাপাখানা বন্ধ করতে হবে। তাই শতাব্দীপ্রাচীন বিশ্বভারতীর প্রেসও বন্ধ হয়।
advertisement
সূত্রের খবর, ছাপাখানা বিভাগে ম্যানেজার-সহ ৩৯ জন কর্মী ছিলেন। ২০১৮ সালে ছাপাখানার দায়িত্বে থাকা ম্যানেজারকে কলকাতার গ্রন্থন বিভাগে পাঠানো হয়। বাকি কর্মীদেরও একে একে পাঠানো হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে। ওই বছর শেষের দিকে ছাপার কাজ পুরোপুরি ভাবে বন্ধ হয়ে যায়। বিশ্বভারতী একটি নোটিস জারি করে জানায়, গ্রন্থন বিভাগের ডিরেক্টরকে চেয়ারপার্সন করে ১০ জনের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ছাপাখানা নিয়ে বৈঠকও ডাকা হয়।যন্ত্রপাতি এবং বাড়িটি নিয়ে কী করা হবে, তা ওই বৈঠকে ঠিক হবে বলেই জানা যায়।এমনকিপ্রেসের মেশিনগুলিও নিলাম করা হতে পারে বলে কর্মিমহলে গুঞ্জন ছড়ায় সেই সময়।
আরও পড়ুন : ইউরিক অ্যাসিডের যন্ত্রণায় মাটিতে পা ফেলতে পারেন না? এই ঘরোয়া খাবারগুলি খান সকালে, দূর হবেই কষ্ট
উল্লেখ্য রবীন্দ্রনাথের হাত ধরেই ১৯১৮ সালে শান্তিনিকেতনের ছাতিমতলার পাশে ছাপাখানার পথচলা শুরু। সত্তরের দশকে প্রেস উঠে আসে পূর্বপল্লীর মাঠের পশ্চিমে। সেই প্রেস এখন বিশ্বভারতীর ছাত্র সমন্বয় দফতর। নষ্ট হচ্ছে রবিঠাকুরের প্রিয় ছাপাখানার যন্ত্রাংশ। শান্তিনিকেতনের প্রবীণ আশ্রমিক, প্রাক্তনী ও পড়ুয়ারাদের কথায়,রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতন প্রেসকে আর পাঁচটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে মিলিয়ে ফেললে চলবে না। রবি ঠাকুরের ছাপাখানা আদতে পরতে পরতে ইতিহাস ও ঐতিহ্যের মেলবন্ধনের স্বাক্ষর।