১৯৮৯ সাল থেকে দুরমুট গ্রামে মামার বাড়িতে থাকছেন নীলরতন। সেখান থেকেই শুরু হয় তার সংগ্রামের পথচলা। স্ত্রী সহ এক ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে তার ছোট্ট সংসার। তবে এই সংসার আর পাঁচটা সাধারণ পরিবারের মতো নয়। কারণ এই পরিবারের মূল ভরসাই হলেন এমন একজন মানুষ, যিনি দৃষ্টিশক্তি হারিয়েও থেমে যাননি। নীলরতন জন্ম থেকে পুরোপুরি অন্ধ ছিলেন না। ১৯৯৯ সালে, স্কুলে পড়ার সময় হঠাৎ করেই চোখে সমস্যা দেখা দেয়। চিকিৎসা করানো হলেও শেষরক্ষা হয়নি, চিরতরে হারিয়ে ফেলেন দৃষ্টিশক্তি। এক মুহূর্তে বদলে যায় তার পৃথিবী, ঘনিয়ে আসে অন্ধকার। কিন্তু সেই অন্ধকারেই তিনি খুঁজে পান নতুন আলো।
advertisement
যে আলো ইচ্ছাশক্তির, সাহসের এবং আত্মবিশ্বাসের। পুরুলিয়ার এই মানুষটি ২০০৮ সালে শুরু করেন সাইকেল ও মোটরসাইকেল মেরামতির কাজ। শুরুতে অনেকেই অবিশ্বাসের চোখে তাকিয়েছিল, একজন দৃষ্টিহীন মানুষ কীভাবে গাড়ি সারাই করবেন! কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নীলরতনের নিখুঁত কাজ দেখে মুগ্ধ হয়ে যান সবাই। গ্রাহকদের কথায়, তার হাতে যেন সত্যিই একধরনের যাদু আছে, চোখে দেখতে না পেলেও স্পর্শে, শব্দে, ও অভিজ্ঞতায় বুঝে যান কোথায় কী সমস্যা।
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
কোনও বড় দোকান নেই তার। মামার বাড়ির এক কোণে নিজের তৈরি ছোট্ট ওয়ার্কশপে সারি সারি যন্ত্রপাতি সাজিয়ে নিয়েছেন পরিপাটি করে। সেখানেই রোজ সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নিজেকে ব্যস্ত রাখেন তার প্রিয় গাড়ি মেরামতের কাজে। নীলরতন মাঝি আজ শুধু একজন মেকানিক নন, তিনি এক জীবন্ত অনুপ্রেরণা। সীমিত শারীরিক সক্ষমতার মধ্যেও যে মানুষের ইচ্ছাশক্তি তাকে কতদূর নিয়ে যেতে পারে, তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ তিনি।