এর চব্বিশ ঘণ্টার মধ্য়েই শো কজ করা হল বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাঁটির জেনাডিহি প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষককে। সাক্ষীগোপাল মণ্ডল নামে ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্কলে মিড ডে মিল বণ্টনে অব্য়বস্থা, ছাত্র সংখ্য়া কমে যাওয়া, অনুপস্থিতির মতো একাধিক অভিযোগ আনা হয়েছে। যদিও ওই প্রধান শিক্ষকের দাবি, সাংসদের সামনে ডিএ চাওয়াতেই হেনস্থার মুখে পড়তে হল তাঁকে।
advertisement
দিদির সুরক্ষাকবচ কর্মসূচি নিয়ে গতকাল বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাঁটিতে যান দক্ষিণ কলকাতার তৃণমূল সাংসদ মালা রায়। সেখানকার ডেনাডিহি প্রাথমিক স্কুল পরিদর্শনে যান মালা রায়। স্কুলের প্রধান শিক্ষক সাক্ষীগোপালবাবুর সঙ্গেও কথা বলেন তিনি।
আরও পড়ুন: প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় নয়া মোড়! নিয়োগ তালিকা নিয়ে বিস্ফোরক তথ্য
তখনই ওই শিক্ষক তৃণমূল সাংসদকে প্রশ্ন করেন, অন্য়ান্য় রাজ্য়ে যেখানে বকেয়া ডিএ মিটিয়ে দেওয়া হচ্ছে, সেখানে এ রাজ্য়ে সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া ডিএ কবে মেটানো হবে? সাংসদকে ওই প্রধান শিক্ষক বলেন, 'আমাদের রাজ্য়ে তিন শতাংশ ডিএ, অন্য় রাজ্য়ে একটু বেশি হয়েছে।'
এই প্রশ্ন শুনে তৃণমূল সাংসদ পাল্টা ওই শিক্ষককে বলেন, এ রাজ্য়ে সাধারণ মানুষের জন্য় অনেক কিছু আছে যা অন্য় রাজ্য়ে নেই। ডিএ-কে ব্য়ক্তিগত স্বার্থ বলেও উল্লেখ করেন তৃণমূল সাংসদ।
এই কথোপকথনের পর মুহূর্তেই গঙ্গাজলঘাঁটির তৃণমূল ব্লক সভাপতি নিমাই মাজি স্কুলের জলের ফিল্টার কেন ঠিকমতো ব্য়বহার করা হচ্ছে না, তা নিয়ে রীতিমতো ধমকান ওই প্রধান শিক্ষককে। কিছুক্ষণ পরে স্কুলের বাইরে গিয়ে ফোনে কোনও সরকারি আধিকারিককে ওই প্রধান শিক্ষককে শো কজ করার জন্য় নির্দেশ দিতে দেখা যায় তৃণমূলের ব্লক সভাপতিকে।
তার পরই এ দিন ওই প্রধান শিক্ষককে বাঁকুড়ার জেলা প্রাথমিক বিদ্য়ালয় সংসদের অফিসে তলব করা হয় প্রধান শিক্ষককে। মিড ডে মিলে অনিয়ম সহ বেশ কয়েকটি অভিযোগ তুলে ওই শিক্ষককে শো কজ করা হয়। এ দিনই সেই সমস্ত অভিযোগের জবাব দিয়েছেন সাক্ষীগোপাল মণ্ডল।
পরে ওই প্রধান শিক্ষক বলেন, 'আমি বিনয়ের সঙ্গেই মালা ম্য়াডামের কাছে ডিএ নিয়ে জানতে চেয়েছিলাম। সরকারকে অপদস্থ করা আমার উদ্দেশ্য় ছিল না। হয়তো সেটা ওনার ভাল লাগেনি। তাছাড়া বিরোধী সংগঠন করি বলেও হয়তো আমাকে শো কজ করা হল।'
আরও পড়ুন: মুখ পুড়ল রাজ্য়ের, তৃণমূলের পুরপ্রধানকে সরিয়ে দিল হাইকোর্ট! কংগ্রেসের দখলেই ঝালদা
ওই শিক্ষক অল বেঙ্গল প্রাইমারি টিচার্স অ্য়াসোশিয়েশন বা এবিপিটিএ-এর সদস্য়। সংগঠনের অভিযোগ, ন্য়ায্য় দাবি নিয়ে প্রশ্ন তুলে কেন এ রকম হেনস্থার মুখে পড়তে হবে সাক্ষীগোপাল বাবুকে? এই অভিযোগ তুলে সরব হয়েছে বিরোধীরাও। গোটা ঘটনায় রাজনৈতিক বিতর্কও তুঙ্গে উঠেছে। এই ঘটনার প্রতিবাদে এ দিনই স্থানীয় বিডিও অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখায় বিজেপি।
স্কুল শিক্ষা দফতর ও প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের পক্ষ থেকে অবশ্য় দাবি করা হয়েছে, ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অতীতেও অভিযোগ এসেছিল। তাঁকে সতর্কও করা হয়েছিল। ফের অভিযোগ আসায় এ দিন ওই শিক্ষককে ডেকে ফের সতর্ক করা হয়েছে। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, বিরোধীরা কুৎসা করছে। তাই বিরোধীরা কী বলল তাতে কিছু যায় আসে না।
তৃণমূল সাংসদ মালা রায়ও দাবি করেছেন, 'ডিএ চাওয়ার জন্য় শোকজের বিষয় নেই। উনি স্কুলের বাচ্চাদের সরকারের দেওয়া জুতো পরতে দেন না। হাওয়াই চপ্পল পরে বাচ্চারা স্কুলে আসে। খালি পায়ে স্কুলে থাকে। ওনাকে হুঁশিয়ারি দেয়নি কেউ। জলের পিউরিফায়ার কেন ব্য়বহার হচ্ছে না, সেই প্রশ্ন তুলেছিলেন আমাদের নেতা।'