এক সময় যেখানে শিক্ষার নামগন্ধ ছিল না। এখনও যেখানে বাল্যবিবাহ, মোবাইলআসক্তি, পরিযায়ী শ্রমিকদের বসবাস মতো অন্ধকার বাস্তবতা নিত্যসঙ্গী। ২০২৫ সালের হাই মাদ্রাসা পরীক্ষায় বিদ্যালয় থেকে অংশ নেয় ৮৯ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে পাশ করেছে ৭০ জন বলে জানা যায়। তাঁদের মধ্যে ৩ জন হিন্দু উপজাতি (SC) ছাত্রী সফলভাবে উত্তীর্ণ হয়েছেন। এক সময়ে যে অঞ্চল বহুত্ববাদ বা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত ছিল। সেই একই জায়গা আজ মানবিক মূল্যবোধ আর সহনশীল শিক্ষার গর্বিত নজির তৈরি করেছে।
advertisement
“আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন”
তবে গোটা সফলতার মাঝে সবচেয়ে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে এক নাম ইসাহাক আহমেদ। ইসাহাক একজন ফেরিওয়ালা দরিদ্র পরিবারে ছেলে। বাবা সারাদিন ফেরি করে ও মা বিড়ি বেঁধে সংসার চালান। সাত ছেলে মেয়ে ও স্বামী স্ত্রী সংসারে মোট নয় জন সদস্য। বাবা কাপড় ফেরি করে। কখনও সাইকেলে, কখনও মাথায় বোঝা বয়ে। মা সারাদিন ঘড়ের কাজ করে বিড়ি বাঁধে। বাবার সঙ্গে সংসারের হাল ধরতে এবং পড়াশোনার খরচ জোগাতে মাঝে মাঝে ইসাহাক গ্রামে গ্রামে ফেরি করে। কোন রকমে সংসার চলে। কিন্তু সেই ঘামে ভেজা মনের মধ্যেও সে বুনে রেখেছিলপড়াশোনা করে দারিদ্র্যতা কাটিয়ে মানুষ হতে হবে। সকাল-সন্ধ্যার হকারি শেষে রাতে আলো জ্বালিয়ে পড়েছে। আর সেই ফলস্বরূপ সে পেয়েছে ৭৩৮ নম্বর। সম্ভবত ব্লক স্তরে তৃতীয় স্থান। নূর জাহানারা স্মৃতি হাই মাদ্রাসায় প্রথম স্থান হয়েছে।
আরও পড়ুনRoad Bad Condition: রাস্তা তৈরির এক বছরের মধ্যে বেহাল দশা! ক্ষোভে ফুঁসছে স্থানীয় মানুষ
ইসাহাক জানাই, “আমি ফেরি করেও পড়াশোনা চালিয়ে গেছি। আমার মা রোজ সকালে বলেন, ‘তুই পারবি, বাবা।’ সেই বিশ্বাসই আমাকে টেনে নিয়ে গেছে এখানে। যদি ফোন থাকত, অনলাইন ক্লাস আরও ভাল ভাবে করতে পারতাম। তখন হয়তো নম্বর আরও ভাল হতো।”কিন্তু নূর জাহানারা স্মৃতি হাই মাদ্রাসা থেকে মাধ্যমিকে ৭৩৮ নম্বর পেয়েও যেন রাতে ঘুম আর আসেনা। যখন বাবা বললেন আর পড়াশোনা করাতে পারবে না। হঠাৎ সেই স্বপ্ন পূরণ করতে এগিয়ে এলেন জঙ্গিপুরের পুলিশ জেলার এসপি অমিত কুমার সাউ ও ফরাক্কা থানার আইসি নীলোৎপল মিশ্র।তার পড়েই ইসাহাকের দায়িত্ব যেন আরও বেড়ে গেল। আগে পড়াশোনার পাশাপাশি সংসারের দায়িত্ব ছিল কিছুটা। এখন পরিবারের ও গ্রামবাসীর মুখ রক্ষা করা। এছাড়া পুলিশ প্রশাসনের তার উপর ভরসা রাখাটা একটা বড় দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে পড়াশোনা করতে হবে। আগামী দিন বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে চাই। একদিন ডাক্তারহব। গরিবদের পাশে দাঁড়াব।
পরিবারের পক্ষ থেকে জঙ্গিপুরের পুলিশ জেলার এসপি অমিত কুমার সাউ ও ফরাক্কা থানার আইসি নীলোৎপল মিশ্র কে ছেলের পড়াশোনা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ জানান।
কৌশিক অধিকারী