পুণ্যার্থীরা মনস্কামনা পুরণের জন্য এই দিন নানা ধর্মীয় ক্রিয়াকর্মের মধ্যে দিয়ে এই ব্রত পালন করেন। একইভাবে এই দিন শিবনিবাস মন্দিরে দিনভর চলে নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠান। দূর দূরান্ত থেকে হাজার হাজার ভক্ত ছুটে আসেন মন্দির প্রাঙ্গনে। ভক্তবৃন্দদের সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে মন্দির চত্বর ঘিরে রাখা হয় কড়াপুলিশি প্রহরায়। এছাড়াও শিবরাত্রি উপলক্ষে শিব নিবাস মন্দির সংলগ্ন এলাকায় মেলার আয়োজন করা হয়। মেলাতে ঘিরেও উপস্থিত স্থানীয় ও বহিরাগত মানুষজনদের বাড়তি উৎসাহ লক্ষ করা যায়। এই মন্দিরের পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে চূর্ণী নদী।
advertisement
আরও পড়ুন : সাবুদানা কি ব্লাড সুগারে খাওয়া যায়? সাবুদানা খেলে কতটা বাড়ে ডায়াবেটিস? জানুন
জনশ্রুতি আছে যে, দেবাদিদেব শিবের স্বপ্নাদেশের পর মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র তাঁর নতুন রাজধানী কৃষ্ণগঞ্জে স্থাপন করেছিলেন এবং ১০৮ টি মন্দির নির্মাণ করেছিলেন। তবে ইতিহাসবিদরা আরও কিছু যুক্তি দিয়েছেন। কেউ কেউ বলেন, ১৮ শতকের মাঝামাঝি মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র বহিরাগত শত্রু মারাঠাদের আক্রমণের হাত থেকে তাঁর রাজধানী কৃষ্ণনগরকে বাঁচানোর জন্য চূর্ণী নদীর ধারে অবস্থিত কৃষ্ণগঞ্জের শিব নিবাস এলাকা বেছে নেন। এবং আক্রমণকারীদের থেকে তিনি সুরক্ষিত থাকেন। তাঁর রাজধানী স্থানান্তরিত হওয়ার পরে মহারাজা সম্ভবত এই জায়গাটির নাম ‘শিবনিবাস’-এর নামকরণ করেন।
প্রচলিত বিশ্বাস, এটি মহাদেব নিজেই করেছেন। আবার অনেকে বলেন, এই নামটি তাঁর পুত্র শিবচন্দ্রের নামে রাখা হয়েছিল। মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের রাজত্বকালে বাংলায় সাংস্কৃতিক বিপ্লব হয়েছিল। তাঁর জ্ঞান, শিক্ষা ও সংস্কৃতি তাঁকে বাংলার সাংস্কৃতিক ইতিহাসে একটি অনন্য স্থান দিয়েছে। তাঁর নবরত্ন (নয়টি রত্ন) সভা এখনও বাংলার সাংস্কৃতিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই মন্দিরের ছাদ ঢালু এবং গম্বুজবিশিষ্ট। যা ঐতিহ্যবাহী বাঙালি প্রাচীন পরম্পরাকে অনুসরণ করে না। এই মন্দিরে রয়েছে পোড়ামাটি কাজ।
এখানে সবচেয়ে বড় শিব মন্দিরটি বুড়ো শিব নামে পরিচিত। চূড়া সমেত মন্দিরের উচ্চতা ১২০ ফুট। মন্দিরের ভেতরের শিবলিঙ্গ দ্বিতীয় উচ্চতম শিবলিঙ্গ। এছাড়াও শিবনিবাসের অন্যান্য মন্দিরগুলো রাজ রাজেশ্বর মন্দির, রাম-সীতা মন্দির, বুড়ো শিব মন্দির নামে পরিচিত। যদিও বর্তমানে এখানে ১০৮ টির মধ্যে মাত্র কিছু মন্দিরের অস্তিত্ব লক্ষ করা যায়। যার মধ্যে একটিতে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম শিবলিঙ্গ রয়েছে। পাশাপাশি এখানে রাম সীতা মন্দিরের সঙ্গে রয়েছে আরও দুটি শিব মন্দির এবং কৃষ্ণচন্দ্রের প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ, যা মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের প্রাচীন ইতিহাসের ঐতিহ্য বহন করে চলেছে।