প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের গাড়ি ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণ করে উড়িয়ে দেওয়ার ছক কষা হয় সেইসময়। অবশেষে এই মাওবাদিদের দমন করতে আনা হয় কেন্দ্রীয় বাহিনীকে। তবে মাওবাদী দমনে ২০০৬ সালে মেদিনীপুরে আনা হয় প্রথম অ্যান্টি ল্যান্ডমাইন গাড়ি। এই গাড়ি যৌথবাহিনী সহ রাজ্য পুলিশকে নিরাপত্তা দেয়। বিভিন্ন বড় বড় ধরনের দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা করে আজও জীবন বাঁচিয়েছে বহু মানুষের। শুধু দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়াই নয় সেই সঙ্গে ঝুঁকি নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে করেছে একাধিক অপারেশন।
advertisement
আরও পড়ুন: শরীরে কোন ‘জিনিসের’ অভাবে ‘ঘুম’ আসে না বলুন তো? সতর্ক হন! নইলেই…
২০০৬ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত অংশ নিয়েছে এই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার একাধিক মাও-অপারেশনে। এরপর সেই অ্যান্টি ল্যান্ডমাইন গাড়ি সরকারি নিয়মে অবসর নেয়। তবে তার কৃতিত্বকে ছোট করে দেখায়নি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশ। ইতিমধ্যে সেই অবসর নেওয়া অ্যান্টি ল্যান্ডমাইন গাড়িকে অতি সযত্নে দেখভাল করে রাখা হয়েছে মেদিনীপুর জেলার পুলিশ সুপারের অফিসের সামনে। মূলত প্রদর্শনী এবং সেই সঙ্গে তার স্মরণীয় দিকগুলি তুলে ধরার জন্যই পুলিশি ব্যবস্থা। পুলিশ সুপারের অফিসে আসা মানুষজন সেই গাড়ির যেমন কৃতিত্ব জানতে পারছেন তা শুধু না, সেই সঙ্গে বহু মানুষ আসছেন এই অ্যান্টি ল্যান্ডমাইন গাড়িটি কাছ থেকে একবার দেখতে।আজও সমহিমায় সগৌরবে নিজের কৃতিত্ব বহন করে চলছে এই যন্ত্র গাড়িটি।
এই গাড়িটির স্মৃতিকে সকলের সামনে তুলে ধরেছে জেলা পুলিশ। গাড়িটির বয়ানে সেখানে লেখা হয়েছে, “আমি এমপিভি নং – ৩৪ এস – ৩৩৫৬।আমার পুরো নাম মাইন প্রটেক্টেড ভেহিকেল।আমি গত ২০০৬ সালের ৩মে জঙ্গলমহল অধ্যুষিত পশ্চিম মেদিনীপুরে আমার যোগদান। এরপর বিভিন্ন থানার পাশাপাশি শালবনী, পিড়াকাটায় আমার বেশিরভাগ সময় অতিবাহিত হয়েছে। আমি মাওবাদী হামলা,বন্দুক গুলি,ল্যান্ড মাইন,আর ডিএক্স, ডিনামাইড হামলার মুখোমুখি হয়েছি। কিন্তু কিছুই আমাকে দায়িত্ব থেকে বিরত রাখতে পারেনি। যন্ত্রটি লিখেছে, যে তারা জানে না আমি ১৪ কেজি পর্যন্ত আরডিএক্স প্রতিরোধ করতে পারি। সুবর্ণরেখা কংসাবতী ও শিলাবতী নদীর যেমন জল বেড়েছে তেমনি আমার ধীরে ধীরে বয়স বেড়েছে। চাকরির নিয়ম অনুযায়ী ২০১৪ সালের ৩মে আমি অবসর নিয়েছি। যদিও আমার কোনও সংসার নেই। তবে আমি সেইসব পুলিশ কর্মীদের সঙ্গে সময় কাটিয়েছি যারা সংসার সন্তান, স্ত্রী বাবা-মা,বন্ধু বান্ধব ছেড়ে জনগণের নিরাপত্তার জন্য তাদের মূল্যবান জীবন উৎসর্গ করেছিল।”
জেলা পুলিশের বক্তব্য, যেভাবে এই গাড়ি একের পর এক বড় বড় দুর্ঘটনার হাত থেকে পুলিশকে রক্ষা করেছে, বিভিন্ন অপারেশনে অংশ নিয়েছে। তাই তার কৃতিত্ব তুলে ধরতেই এই প্রয়াস। শুধু পশ্চিম মেদিনীপুরে না বাঁকুড়া জেলাতেও প্রদর্শনীর জন্য রাখা হয়েছে এই ধরনের গাড়ি। স্বাভাবিকভাবে জেলাবাসীর কাছে আকর্ষণের এই অ্যান্টি ল্যান্ডমাইন গাড়ি।
রঞ্জন চন্দ