১৯৪৬ সালে জন্ম, মসলন্দপুরের বেরগুম এলাকার বাসিন্দা দেবকুমার মুখোপাধ্যায়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে অনার্স ও এমএ পাশ করার পর শুরু হয় তাঁর কর্মজীবন, গোবরডাঙ্গা কলেজে অধ্যাপনার মাধ্যমে। জরুরি অবস্থার সময় রাজনৈতিক চাপের কারণে আত্মগোপনে যেতে হয় তাঁকে। পরে ফের শিক্ষকতায় ফিরে আসেন হাবড়া থানার অন্তর্গত জানাফুল হাই স্কুলে। এরপর, বনগাঁ হাই স্কুলে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন এবং পরে জলেশ্বর হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক নিযুক্ত হন।
advertisement
জলেশ্বর হাই স্কুলে তাঁর উদ্যোগে তৈরি হয় নতুন ভবন, আশপাশের গ্রামের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে পড়াশোনার মানে উন্নয়ন ঘটিয়ে, স্কুলের ফলাফলে ছুঁয়ে ফেলে নতুন মাইল ফলক। তাঁর এই কৃতিত্বের ভিত্তিতে ১৯৯৮ সালে তাঁকে বনগাঁ হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত করা হয় এবং সেখান থেকেই ২০০৬ সালে অবসর গ্রহণ করেন দেবকুমার মুখোপাধ্যায়। প্রধান শিক্ষক হিসেবে তিনি শুধু পাঠ্যপুস্তকের মধ্যেই থেমে থাকেননি, স্কুলের পরিকাঠামোতেও এনেছিলেন নানা আধুনিক পরিবর্তন। তৈরি করেন বিজ্ঞান ভবন-সহ আরও আনেক কিছু।
স্কুল প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে থাকা ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করা পুরনো কাঁঠালগাছটি মারা যেতে বসেছিল। কিন্তু তিনি হাল ছাড়েননি। বিদ্যাসাগর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজ্যের উদ্যান পালন দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করে বৈজ্ঞানিকদের এনে গাছটির চিকিৎসা শুরু করেন। আজও সেই গাছ দাঁড়িয়ে আছে বনগাঁ হাই স্কুলের আঙিনায়, মাথা উঁচু করে। আর সেই থেকেই দেবকুমার মুখোপাধ্যায়ের এই গাছটির সঙ্গে তৈরি হয়েছিল বন্ধুত্বের সম্পর্ক। শুধু গাছই নয়, হারিয়ে যাওয়া বহু ছাত্রকে পুনরায় স্কুলে ফিরিয়ে এনে তিনি তাঁদের জীবনের গতিপথ বদলে দেন। আজকের দিনে সেই ছাত্ররা দেশের নানা প্রান্তে প্রতিষ্ঠিত। এমনকি, স্কুলের একটি ভবন ভাঙার মামলা তিনি নিজেই লড়েন, কোনও আইনজীবীর সহায়তা ছাড়াই। শেষমেশ সেই মামলা জিতে ভবনটি রক্ষাও করেন। বিচারকের প্রশংসাও কুড়িয়েছিলেন দেব কুমার মুখোপাধ্যায়।
২০০৬ সালে অবসর নিলেও, বনগাঁর শিক্ষা জগতে তার ভূমিকা প্রতিমুহূর্তে অনুভব করতেন সকলে। বৃহস্পতিবার মৃত্যু হয় জনপ্রিয় এই শিক্ষকের। দিনটা বনগাঁর শিক্ষা জগতের ইতিহাসে এক কালো দিন হয়ে রইল।
Rudra Narayan Roy