সন্ধ্যায় সেথা জ্বলে না প্রদীপ, প্রভাতে পড়ে না ঝাঁট।’
বা
‘পড়ন্ত রোদে পথের প্রান্তে অশ্বত্থের পাতা কাঁপছে
কি শীত গ্রীষ্ম কেঁপেই আসছে তারাবলি-
বন্ধুর অশ্বত্থের গুঁড়িএকঠাঁয়ে খাড়া ভাবছে।’
এই সব বিখ্যাত কবিতার কবির জন্ম শান্তিপুরেই। ১৮৮৭ সালের ২৬ জুন কালনার পাতিলপাড়ায় মামারবাড়িতে জন্ম হলেও শান্তিপুরের হরিপুর এলাকাতেই পৈতৃক বাড়ি ছিল কবি যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের এবং ছোটবেলার বেশ কিছু বছর কেটেছে এখানেই হরিপুর গ্রামের বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করতে-করতেই ১২ বছর বয়সে তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য চলে যান কলকাতায়। পরে এক সময়ে নদিয়া জেলা বোর্ডে চাকরিও করেছেন। ১৯২৩ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘মরীচিকা’। পরে ‘মরুমায়া’, ‘মরুশিখা’, ‘ত্রিযামা’-সহ একাধিক কাব্যগ্রন্থে নিজ প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন তিনি।
advertisement
আরও পড়ুন: কুয়োতে উঁকি মারতেই চমকে উঠল পিলে… দানবাকার ওটা কী! হাড়হিম কাণ্ড
কবির মৃত্যুর পর, তাঁর পরবর্তী প্রজন্ম কিছুদিন যোগাযোগ রাখলেও, পরবর্তীতে সহৃদয় হয়ে বন্যা পীড়িত এক পরিবারকে আশ্রয় দেওয়ার সঙ্গে রক্ষণাবেক্ষণের মৌখিক দায়িত্ব দেন, যদিও তারও পরবর্তী সময়ে তাদের আর লক্ষ্য করা যায়নি।তবে বর্তমানে কবির বসতবাড়ি অবহেলায় পড়ে রয়েছে। সংস্কারের অভাবে জীর্ণ দশা সেটির। রয়েছে একটি স্মৃতিফলক। বাড়িটি সংস্কারের দাবি এলাকার বাসিন্দারা অনেক দিন ধরেই তুলছেন, প্রশাসনের কাছেও তাঁরা আর্জি জানিয়েছেন। তাঁদের উদ্যোগে আগেই গঠিত হয়েছে কবি যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত স্মৃতিরক্ষা কমিটি। স্মরনোৎসবও হয় প্রতি বছর। কিন্তু হাল ফেরেনি কবির বসতবাড়ির। অন্যদিকে বর্তমান বসবাসকারী ওই পরিবারের সঙ্গে স্মৃতি রক্ষা কমিটির নানান জটিলতা সৃষ্টি হয়।
আরও পড়ুন: মানুষের আস্থাই রোজগারের পথ, মাজদিয়ার নীলমাধবের
এ বিষয়ে স্থানীয় পঞ্চায়েত পঞ্চায়েত সমিতি বিধায়ক এমনকি জেলা পরিষদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন সুতি রক্ষা কমিটি। বিভিন্ন সময়ে নানান জনপ্রতিনিধিরা সে বিষয়ে সাময়িক উদ্যোগী হলেও সংরক্ষণশালা কিংবা লাইব্রেরী গঠনে স্থায়ী কোনও উদ্যোগ গ্রহন করতে দেখা যায়নি।সদ্য গঠিত হয়েছে শান্তিপুর পঞ্চায়েত সমিতি, পঞ্চায়েত সদস্য কমল বিশ্বাস এদিন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নৃপেন মন্ডল কবির জন্মভিটা প্রদর্শনে আসেন, গ্রামের মানুষের সঙ্গে কথা বলে এবং স্মৃতি রক্ষার কমিটির আন্দোলনে আগ্রহী হয়ে তারা এখানে নতুন ভবন নির্মাণ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
স্মৃতি রক্ষা কমিটির সভাপতি সুমন্ত মুখোপাধ্যায় তাদের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান। তিনি বলেন শান্তিপুর তথা নদিয়াবাসী গর্বিত এই এলাকায় তাঁর জন্মভিটে হওয়ার কারণে। কবির ব্যবহারের খুব বেশি জিনিসপত্র না থাকলেও যেটুকু আছে তা সংরক্ষণশালা হিসাবে মানুষের কাছে তুলে ধরা এবং একটি লাইব্রেরী স্থাপনের মধ্য দিয়ে এই এলাকার ছাত্র-ছাত্রীদের বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে চান। যার মধ্য দিয়ে কবির সাহিত্যচর্চা এ প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের কাছে তুলে ধরা যায়। তবে গর্বের বিষয় স্থানীয় পঞ্চায়েত এবং সমিতির তত্ত্বাবধানে রাস্তার নামকরণ করা সম্ভব হয়েছে। তিনি আশাবাদী সমস্ত বাধা কাটিয়ে আগামীতে সংরক্ষণশালা এবং গ্রন্থাগারও স্থাপিত হবে।
Mainak Debnath