কথিত রয়েছে, শ্রীচৈতন্যদেব সন্ন্যাস নেওয়ার এক বছরের মাথায় শান্তিপুরে ৪ মাঘ এসেছিলেন শচীমাতাকে দর্শনের জন্য। শচীমাতাকে দর্শনের পরেই পুরীধামে চলে যাওয়ার কথা ছিল তার। অচমকা পুরীর যাত্রা বাতিল করে তিনি নবদ্বীপে আসার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। শ্রীবাস, গদাধরকে সঙ্গে নিয়ে কীর্তন করতে তিনি নবদ্বীপে চলে আসেন। বিষ্ণুপ্রিয়াদেবী সেই সময় বাড়িতে পুজো করছিলেন। সন্ন্যাসীদের স্ত্রীর মুখ দর্শনের নিয়ম নেই। তাই উঠোনে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলেন মহাপ্রভু। বিষ্ণুপ্রিয়াদেবী ঘর থেকে বের হয়ে স্বামীকে প্রণাম করতে যান।
advertisement
“আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন”
প্রণাম শেষ হতেই বিষ্ণুপ্রিয়াদেবী দেখেন, এক জোড়া পাদুকা রেখে গিয়েছেন মহাপ্রভু। সামনে মহাপ্রভু নেই।ওই দিন রাতে বিষ্ণুপ্রিয়াদেবী মায়ের স্বপ্নাদেশ পান, জন্মভিটের নিম গাছ থেকে কাঠের বিগ্রহ তৈরি করে পুজো করতে এবং তার সঙ্গে পাদুকাও পুজো হবে। সেই থেকে মহাপ্রভুর পাদুকা পুজো হয়ে আসছে। বিষ্ণুপ্রিয়াদেবীর ভাইয়ের বংশধররা ওই পাদুকা যুগল সুরক্ষিত রেখেছেন।
বর্তমান সময়কালে ১৯৬০ সালের পর ওই পাদুকা দু’টিকে একটি রুপোর খাপের মধ্যে রাখা হয়।জানা যায়, বহু আবেগের এবং স্মৃতিবিরজিত কাঠের তৈরি এই পাদুকাদ্বয় আজও অক্ষত তবে বর্তমানে সারা বছর প্রায় বায়ু নিরোধক কাচের তৈরি বাক্সে বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করে তা রাখা থাকে সযত্নে। আশ্চর্যজনকভাবে সারা ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা ভক্তবৃন্দদের বিশেষ আবেদন এবং সরকারি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বছরের বিভিন্ন সময়ে বিশেষ করে ৷
সেই সমস্ত এলাকাগুলিতে শ্রীচৈতন্যদেবের জীবদ্দশায় পৌছানো তারিখ অনুযায়ী ভক্তবৃন্দরা নিজে নিজে এলাকাতে স্বচক্ষে দেখে পূণ্য লাভ করেছেন। অথচ শান্তিপুরের সাথে পড়াশোনার সুবাদে শিক্ষাগুরু অদ্বৈত আচার্যের শ্রীচৈতন্যদেবের নিয়মিত যাতায়াত এবং শচীমাতার বেশ কিছুদিন থাকা সত্বেও ঢিল ছোড়া দূরত্বে শান্তিপুরে, সেই পাদুকাদ্বয় এসে পৌঁছাতে সময় লেগে গেলো প্রায় ৫০০ বছর।
যদিও এক বিশেষ সূত্রের খবর অনুযায়ী জানা গেছে, ধর্মীয় ভাবাবেগ সম্পন্ন এবং বহু প্রাচীন এইরকম এক মহাপুরুষের ব্যবহৃত জিনিস আনা বেশ খানিকটা ব্যয় সাপেক্ষ। তার ওপর সরকারি বিভিন্ন বিধি নিষেধ তো রয়েইছে। শান্তিপুরের বড় গোসামী বাড়ি সহ বিভিন্ন সুবিশাল মন্দির সংস্কার এবং সারা বছর ধরে বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান পুজো পাঠ এবং আনুষাঙ্গিক খরচের কারণেই হয়তো যথেষ্ট ব্যয় সাপেক্ষ এই উদ্যোগ আগে কখনো নেওয়া হয়নি।
তবে পূর্ব ঘোষিত সময় অনুযায়ী আজ পাদুকাদ্বয় স্বচক্ষে দর্শন করতে, শান্তিপুরের মানুষ তো বটেই সকাল থেকে জেলা এবং রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের ভক্তবৃন্দ এবং বড় গোস্বামী বাড়ির দূর দূরান্তের শিষ্যরা হাজির হয়েছিলেন। মন্দির কর্তৃপক্ষ জানান, বিকালে একটি ছোট নগর ভ্রমণ করার পর পাদুকাদ্বয় ফিরে যাবে যথাস্থান নবদ্বীপে।
Mainak Debnath