আজকের দিনে ইংরেজি ভাষার দাপটে সেই মাতৃভাষার প্রতি ভালবাসা ক্রমশ ম্লান হয়ে যাচ্ছে। নতুন প্রজন্ম বাংলাভাষা থেকে ধীরে ধীরে দূরে সরে যাচ্ছে। তাই এবারের দুর্গোৎসবের মূল বার্তা— বাংলা ভাষাকে ভুলে গেলে হারিয়ে যাবে আমাদের বাঙালিয়ানা, আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের শিকড়। ১৫০ বছরের পুরনো এই পুজোয় আজও মা উমা পূজিত হন স্নেহভরে ‘বড়মা’ নামে। সময়ের স্রোতে অনেক কিছু বদলালেও গ্রামের মানুষদের কাছে এই পুজো কেবল ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি একটি মিলনমেলা, যেখানে একত্রিত হয় আবেগ, ভালবাসা আর উৎসবের উচ্ছ্বাস। ঢাকের বাজনা, শঙ্খধ্বনি, কাশফুলের দোলা আর ধূপের গন্ধে ভরে উঠছে গোটা গ্রামাঞ্চল।
advertisement
আরও পড়ুন: বসিরহাটের ‘এই’ পুজো মণ্ডপে গেলেই চোখের সামনে ভেসে উঠবেন নচিকেতা, কী এমন আয়োজন করলেন উদ্যোক্তারা
এক মাস আগে থেকেই শুরু হয়েছে পুজোর প্রস্তুতি। অক্লান্ত পরিশ্রমে গ্রামের যুবকেরা দিনরাত কাজ করে চলেছেন। থিম তৈরির জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে থার্মোকল, আর সাজসজ্জার জন্য ধান, কালোজিরে, মেথি, সরষে, সাবু সহ নানা শস্য। এই সব উপকরণ মণ্ডপে এনে দিচ্ছে এক আলাদা মাত্রা, যা প্রকৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে একাকার হয়ে যাচ্ছে।
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
ক্লাবের সম্পাদক পিন্টু পাল বলেন, “আমাদের পুজো এবছর ১২৫ বছরে পা দিল। ছোটবেলা থেকে সহজপাঠ আমাদের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে। তাই এবছরের থিমে আমরা সেই স্মৃতি ফিরিয়ে আনতে চেয়েছি। আজকের দিনে মাতৃভাষা নিয়ে যেভাবে অপমান করা হচ্ছে, বিশেষত রাজ্যের বাইরে বাংলায় কথা বলার জন্য, আমরা তার প্রতিবাদ জানাচ্ছি আমাদের থিমের মাধ্যমে।”
দুর্গোৎসবের দিনগুলোতে মণ্ডপে ভিড় জমাবে হাজারো মানুষ। কেউ প্রতিমা দর্শন করবেন ভক্তিভরে, কেউ আবার মণ্ডপের প্রতিটি সাজসজ্জা দেখে হারিয়ে যাবেন শৈশবের সোনালি স্মৃতিতে। আলো-ছায়ার খেলা, ঢাকের আওয়াজ, ধূপের গন্ধে গড়ে উঠবে এক অনন্য আবহ, যেখানে উৎসবের আনন্দের সঙ্গে মিলেমিশে থাকবে গর্ব, ভালবাসা আর প্রতিবাদের সুর। এবারের দুর্গোৎসব তাই শুধুমাত্র আনন্দের নয়, এটি এক অঙ্গীকারের উৎসব— মাতৃভাষা বাংলাকে কখনও ভুলে না যাওয়ার অঙ্গীকার।