মুর্শিদাবাদের এড়োয়ালি গ্রামের পুজোর বিশেষত্ব হল এখানে একই রাজপরিবারে ১৩টি কালীপুজো হয়। সেই নিয়ে মত্ত থাকে পুরো গ্রাম। জানা যাচ্ছে, আজ থেকে প্রায় চারশ বছর আগে রাজা রামজীবন রায় এই কালীপুজোর প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর রাজত্বকালে একটি রাজবাড়িতে একটিই কালীপুজো হত। আলোয় ঝলমল করত গোটা রাজবাড়ি। সকল ধর্মের মানুষের নিমন্ত্রণ থাকত। হাতেগোনা কয়েকদিনের অপেক্ষা শেষে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। কয়েক শতাব্দী প্রাচীন খড়গ্রাম ব্লকের এড়োয়ালি গ্রামে লক্ষ লক্ষ মানুষের ভিড় হবে। জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে সবাই আনন্দে মেতে উঠবেন।
advertisement
এক পরিবারের সদস্য জানান, কথিত আছে, বাংলায় বর্গী হানা সেই সময় একটা নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। রাজা রামজীবন রায় ছিলেন বীরভূম জেলার অন্তর্গত ঢেকা লোকপাড়ার রাজা। এড়োয়ালি তখন বীরভূম জেলায়। বর্গী হানা থেকে প্রজাদের রক্ষা করতে তিনি এড়োয়ালি গ্ৰামে চলে এলেন। তখন মকদম হাজি আলী নামে এক জমিদার রাজাকে পাকাপাকিভাবেই থেকে যেতে বলেন। এদিকে সেই সময় বা তার আগে থেকেই ডাকাতরা ডাকাতি করতে যাওয়ার আগে মা কালীর পুজো করে যেত। ডাকাতদের পূজিতা ছিলেন ডাকাত কালী। রাজা এসে প্রথম সেই কালী মূর্তির পুজো শুরু করেন। আজ তাঁকে আমরা ধর্মবুড়ি নামে পুজো করি।
রাজা রামজীবন-ও ছিলেন প্রজাবৎসল। প্রথমে এই রাজপরিবার ‘রায় রাজপরিবার’ নামে পরিচিত থাকলেও রাজা রামজীবন রায়ের বংশধরেরা বিভিন্ন প্রজাবৎসল কাজ করার জন্য ব্রিটিশদের থেকে ‘চৌধুরী’ উপাধি লাভ করেন। সেই থেকেই এই রাজপরিবার ‘রায়চৌধুরী রাজপরিবার’ নামে পরিচত।
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
রাজা রামজীবনের তিনজন প্রপৌত্র ছিল। তাঁরা হলেন, রাজা দেবদত্ত রায়চৌধুরী, রাজা ইন্দ্রমণি রায়চৌধুরী এবং রাজা শ্যামসুন্দর রায়চৌধুরী, এদের রাজবংশ যথাক্রমে বড়পাঁচানি, ছোটপাঁচানি এবং ছয়ানি রাজপরিবার নামে পরিচিত। বড়পাঁচানিতে পাঁচটি কালী- ধর্ম বা ষষ্ঠী, বেল, কুল, টুংগী ও শ্যামরূপী। ছয়ানি রাজপরিবারের চারটি কালী- বড়মা, মঠ, নিম ও চাতরবুড়ি এবং ছোটপাঁচানি রাজপরিবারে চারটি কালী- ধর্ম বা ষষ্ঠী, মোল, আমড়া ও বেল। এই বেল কালীটিতে শুধু ঘট পুজো করা হয়। এখানে ধর্মকালী ও ষষ্ঠীকালীকে বড়পাঁচানি ও ছোটপাঁচানি রাজপরিবার পালা করে চালায়। বেশিরভাগ কালীকেই ‘বুড়ি’ বলেই ডাকা হয়।