কালীপুজো উপলক্ষে দিল্লি, মুম্বই, কলকাতা থেকে গ্রামে ফেরেন বংশধরেরা। জমিদার মহেশদাস রায়ের মৃত্যুর পর জ্যেষ্ঠ পুত্র রামজীবন এক বিশাল সাম্রাজ্য গঠন করে ১৬৫৬ সালে সিংহাসনে বসেন। তারাপীঠের মন্দির নির্মাণে তাঁর অবদান ছিল। উনিই রাজবাড়িতে কালীপুজো শুরু করেন। বর্তমানে পরিবার শরিকে বিভক্ত হওয়ায় পুজোর সংখ্যা ১৩। তবুও রাজপরিবারের আজও রাজা রামজীবন রায়ের প্রতিষ্ঠিত কালীপুজো ঐতিহ্যবাহী। এই একদিনই রায়চৌধুরী রাজবংশ ফিরে যায় রাজ আমলে। দূরদূরান্ত থেকে আসেন আত্মীয়রা। পুজো হয়ে ওঠে এক মিলনমেলা। নজরকাড়ে চোখ ধাঁধানো আলোকসজ্জা।
advertisement
আরও পড়ুন: গ্রামে অস্থায়ী সিনেমা হল, কালীপুজোয় জঙ্গলমহলে ভিন্ন আয়োজন, চুটিয়ে উপভোগ করলেন আট থেকে আশি
বর্তমানে, রাজা নেই, সেই রাজপাটও নেই। কিন্তু কালীপুজোর দিন একরাতের রাজা হয়ে উঠেন এলাকার বাসিন্দারা। সকাল থেকে পরের দিন সকাল পর্যন্ত লাগামহীন আনন্দে মেতে উঠে মুর্শিদাবাদ জেলার খড়গ্রাম ব্লকের রাজার গ্রাম এড়োয়ালী। এড়োয়ালী গ্রামের শারদ উৎসব বলতে ওই কালীপুজোকেই বলা হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি ওই গ্রামের রাজা ছিলেন রাম জীবন রায়। তিনিই ওই গ্রামে প্রথম কালীপুজোর সূচনা করে ছিলেন।
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
পুজো যখন থেকে শুরু হয়েছিল, সেই তখন থেকেই ওই পরিবারে এক রাতে চারটি কালীর পুজো হয়। সময় গড়ালেও সেই নিয়মের পরিবর্তন ঘটেনি। পারিবারিক সূত্রে দাবি, রাজা রামজীবন রায়ের বংশধর বলতে ছিলেন তিন ছেলে। দেবদত্ত রায়, শ্যামসুন্দর রায় ও ইন্দ্রমুনি রায়। তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার এড়োয়ালীর ওই রাজ পরিবারকে চৌধুরী উপাধি দেয়। তারপর থেকেই ওই পরিবারকে রায় চৌধুরী পরিবার বলেই পরিচিত। কথিত আছে, রাজা রামজীবনের ছেলে ইন্দ্রমুনি খুব অল্প বয়সেই মৃত্যু হয়েছিল। সেই সময় অপর দুই ভাই দেবদত্ত ও শ্যামসুন্দর রাজপাট ভাগ করতে বসেন। সম্পত্তি ভাগ হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুজোপাটেরও ভাগ হয়ে যায়। বড় পাঁচ আনা, ছোট পাঁচ আনা ও ছয় আনা পরিবারের পুজো বলেই পরিচিত আছে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে।
১৩টি কালীমূর্তির নামকরণও আছে। যেমন বড় পাঁচ আনা পরিবারের বেলবুড়ি, টুঙ্গিবুড়ি, কুলবুড়ি ও শ্যামবুড়ির পুজো করে। ছোট পাঁচ আনা পরিবার আমরাবুড়ি ও মৌলবুড়ির পুজো করে। আর ওই অন্যদিকে পৃথক পুজোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল একটি ধর্মবুড়ি ও অপরটি ষষ্ঠীবুড়ি। ছয় আনা পরিবারের চারটি কালীপুজো হয়। বড়কালী, মঠকালী, নিমবুড়ি ও চাতরবুড়ি। এদের মধ্যে পুজো হচ্ছে চাতরবুড়ি। ওই সমস্ত কালীপুজো এলাকার কোনও না কোনও গাছের নীচে হত। তাই যে গাছের নীচে পুজো হত সেই গাছের নামে ওই কালীর নাম দেওয়া হয়েছিল। কালীপুজোর রাতে মূলত আলোকসজ্জা দেখতেই ভিড় জমান বহু সাধারণ মানুষজন। এক রাতের উৎসবে মেতে ওঠেন গ্রামবাসী।