রাজনৈতিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নদিয়া জেলা। নিয়োগ দুর্নীতি ঘিরে এই জেলায় রাজনৈতিক চর্চা চলছে জোর কদমে। গ্রেফতার হয়েছেন পলাশিপাড়ার বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্য। তেহট্টের বিধায়ক তাপস সাহা একাধিক বার জিজ্ঞাসাবাদের সম্মুখীন হয়েছেন। অন্য দিকে কিছুদিন আগেই পদ গিয়েছে বিধায়ক বিমলেন্দু সিনহা রায়ের। এক সময় দলের হয়ে এই জেলা পর্যবেক্ষণ করতেন অধুনা জেল হেফাজতে থাকা পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ফলে এই জেলাকে ঘিরে রাজনৈতিক লড়াইয়ে বিজেপি, কখনও বামেরা হাতিয়ার করেছে সেই নিয়োগ দুর্নীতির বিষয়ে।
advertisement
এই অবস্থায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পঞ্চায়েত ভোটের আগে কী রণনীতি ঠিক করে দেন, সকলের নজর সেদিকেই। ফলে দলনেত্রীর আজকের সভা জেলা নেতৃত্বকে নতুন দিশা দেখাবে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
মতুয়া ভোট, গোষ্ঠীকোন্দল আর একসময় পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দীর্ঘ ছায়া।সেই নদিয়া জেলাতেই রাজনৈতিক সভা করতে চলেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০২৩ পঞ্চায়েত ভোটের আগে এই সভার দিকে নজর রাজনৈতিক মহলের।
আরও পড়ুন : ২০ দিন বয়সি অসুস্থ কন্যাসন্তানকে হত্যার দায়ে গ্রেফতার তরুণী মা
বিজেপি শিবির ইতিমধ্যেই সিএএ নিয়ে সুর চড়াতে শুরু করেছে। যার প্রভাব মতুয়া ভোটব্যাঙ্কের ওপর পড়বে বলে মত রাজনৈতিক মহলের। নদিয়া জেলার ১৭ বিধানসভা আসনের মধ্যে মতুয়া ফ্যাক্টর একাধিক বিধানসভায়।রানাঘাট উত্তর-পূর্ব, রানাঘাট দক্ষিণ, কৃষ্ণগঞ্জ আসনে ৪০% মতুয়া ভোট।মতুয়া প্রভাব আছে শান্তিপুর ও চাকদহ আসনেও।এই জেলার দুই বিধানসভা আসন কল্যাণী ও হরিণঘাটা যা বনগাঁ লোকসভার অন্তর্গত, ২০১৯ ও ২০২১ সালে ফল খারাপ হয় তৃণমূলের। এই জেলার রানাঘাট লোকসভা আসন হাতছাড়া হয়েছে তৃণমূলের।
কৃষ্ণনগর লোকসভার অন্তর্গত ৫ বিধানসভা আসনে ফ্যাক্টর সংখ্যালঘু ভোট। তাই এই সভা থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী বার্তা দেন, সেদিকে নজর রাজনৈতিক মহলের। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটে এই জেলায় ভাল ফল করে তৃণমূল কংগ্রেস। পঞ্চায়েতে এই ভাল ফল বদলে যায় ২০১৯ এর লোকসভা ভোটে। নদিয়া জেলার দুই লোকসভা আসনের মধ্যে কৃষ্ণনগর আসন তৃণমূল কংগ্রেস জিতলেও, বিজেপি পায় রানাঘাট আসন।২০১৯ লোকসভা ভোটের ফলাফল অনুযায়ী, ১১ বিধানসভা আসনে পিছিয়ে ছিল তৃণমূল কংগ্রেস। এগিয়ে ছিল মাত্র ৬'টিতে।
আরও পড়ুন : গুন্ডা, মাফিয়া, তোলাবাজি, দুর্নীতি তো রয়েইছে, এবার ডেঙ্গির সাথেও'? প্রশ্ন দিলীপের
২০২১ -এর বিধানসভা ভোটে, জোর লড়াই হয় তৃণমূল-বিজেপির। শান্তিপুর উপনির্বাচন জিতে ৯ টি বিধানসভায় জয় হয়েছে তৃণমূলের। বিধানসভা ভিত্তিক লড়াইয়ে জোর দিচ্ছে শাসক দল। আবার নদিয়া নিয়ে অভিযোগ গোষ্ঠীকোন্দলেরও।সবচেয়ে বেশি অভিযোগ আসে রানাঘাট সাংগঠনিক জেলা থেকে।এই জেলায় ঘন ঘন সাংগঠনিক নেতাও বদল হয়েছে।যিশু সিংহ, রত্না ঘোষ করের লড়াই নিয়ে বারবার সমস্যায় পড়েছে দল।কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলা নিয়েও বার বার হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে শীর্ষ নেতৃত্বকে।
সাংসদ মহুয়া মৈত্রের সঙ্গে পুরনোদের লড়াই নিয়ে বিব্রত হয়েছে শাসক শিবির।একসময় এই জেলা দেখতেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। নিয়োগ দুর্নীতি কান্ডে তিনি এখন জেলে।সাংগঠনিক দিক থেকে তার ঘনিষ্ঠদের সরানো হয়েছে।কিছুদিন আগেই জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সাংসদ থেকে সরানো হয়েছে বিধায়ক বিমলেন্দু সিংহ রায়কে।ফলে দুর্নীতি কাণ্ডে দল যে কড়া অবস্থান নেবে, তা বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই অবস্থায় গোষ্ঠীকোন্দল রুখে, সাংগঠনিক দিক থেকে সকলে এক থেকে বিজেপির মোকাবিলা করার কী বার্তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেন, রাজনৈতিক মহলের নজর সেদিকে।