নাকাশিপাড়া ব্লকের ভাগীরথী নদীর তীরবর্তী গ্রাম চরকুর্মীপাড়া। এই গ্রামে মূলত আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষের বাস। প্রায় ৫৯০ টি আদিবাসী পরিবার এই গ্রামে বসবাস করে। মোট ভোটার ১০৬৮ জন। নাকাশিপাড়া পঞ্চায়েতের অন্তর্গত ওই গ্রামের এক মাত্র পঞ্চায়েত সদস্য বিজেপির। ভাগীরথীর বর্তমান গতিপথ ও পূর্বের গতিপথের মধ্যবর্তী এলাকায় গ্রামটি অবস্থিত হওয়ায় গ্রামের ভৌগলিক অবস্থান অনেকটাই দ্বীপের মতো।
advertisement
যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হওয়ায় উন্নয়নের ছোঁয়া কার্যত পৌঁছায়নি এই গ্রামে। স্বাধীনতার এতগুলো বছর কেটে গেলেও গ্রামে ছিল না বিদ্যুৎ পরিষেবা। সন্ধ্যা নামলেই অন্ধকার গ্রাস করত গোটা গ্রামকে। যে কারণে দিনের আলোতেই সমস্ত কাজ সেরে ফেলতে হতো গ্রামবাসীদের।
আরও পড়ুন: কালবৈশাখীর সতর্কতা... বইবে লু! দক্ষিণবঙ্গের কোন জেলায়? আবহাওয়ার বড় আপডেট হাওয়া অফিসের
রাতের খাওয়া-দাওয়া থেকে পড়াশোনা সবই চলত কেরোসিনের শিখায়। রাস্তাঘাটও অন্ধকারাচ্ছন্ন হওয়ায় বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘরের বাইরে বেরোতেন না। ওই গ্রামে কোনদিন বিদ্যুৎ পরিষেবা মিলবে এমনটা স্বপ্নেও ভাবতেন না ওই গ্রামের বাসিন্দারা। বছর চারেক আগে প্রায় ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ওই গ্রামে ১৩ টি সোলার প্রজেক্ট চালু করা হয়েছিল। এর ফলে কিছুটা হলেও অন্ধকার দূর হওয়ায় গ্রামের বাসিন্দাদের মুখে হাসি ফুটেছিল। কিন্তু বছর না ঘুরতেই রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে মুখ থুবড়ে পড়ে ওই প্রজেক্ট। ফলে আবারও অন্ধকার নেমে আসে গ্রামে। মাস ছয় এক আগে ওই গ্রাম পরিদর্শনে যান সাংসদ মহুয়া মৈত্র। তখন তিনি গ্রামবাসীদের সমস্যার কথা জানতে পারেন ও সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দেন।
এরপরই তিনি ওই গ্রামে বিদ্যুতায়নের উদ্যোগ নেন। জোর কদমে শুরু হয় ওই গ্রামে বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ। প্রায় চার কিলোমিটার দূরের দাদুপুর গ্রাম থেকে ছাড়ি গঙ্গা পেরিয়ে বিদ্যুৎ নিয়ে আসা হয় এই গ্রামে। গ্রামে বসানো হয় ১০০কিলোওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন তিনটি ট্রান্সফরমার। রবিবার দুপুরে সাংসদ মহুয়া মৈত্র ফিতে কেটে বিদ্যুৎ পরিষেবার শুভ উদ্বোধন করেন। বাড়ি বাড়ি বিদ্যুৎ পরিষেবা পৌঁছনোয় খুশির হাওয়া এলাকায়। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে ওই গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছনোয় বিজেপি শিবিরেও শুরু হয়েছে ভাঙন। এদিনই সাংসদ মহুয়া মৈত্রর হাত ধরে বিজেপি থেকে তৃণমূলে যোগ দিলেন প্রায় ১০০ জন।
মৈনাক দেবনাথ