পশ্চিম মেদিনীপুরের সরকার পোষিত এই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রয়েছে পড়ুয়াদের নিজেদের ব্যাঙ্ক, হাসপাতাল, অডিটোরিয়াম। শিশুদের জন্য আছে স্মার্ট ক্লাসরুমও। শুধু কী তাই! এই স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের হাতেই তৈরি করে ‘শিখন শিক্ষণ উপকরণ’ (TLM)। কয়েকমাস আগে সমগ্র শিক্ষা মিশনের সেই প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থানও অধিকার করেছে তারা। শুধু তাই নয়, অতি সম্প্রতি জেলা প্রশাসন ও জেলা প্রেস ক্লাবের উদ্যোগে আয়োজিত ‘বাল্যবিবাহ’ প্রতিরোধের বার্তাবহ শর্ট ফিল্ম প্রতিযোগিতাতেও খড়্গপুর গ্রামীণের হিজলি সংলগ্ন এই কুচলাচাটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা প্রথম স্থান অধিকার করেছে। আর সেই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা (টিচার ইন-চার্জ) তনুশ্রী দাস আগামী ৫ সেপ্টেম্বর, শিক্ষক দিবসের দিন ‘জাতীয় শিক্ষক পুরস্কার’-এ ভূষিত হতে চলেছেন। এর আগে (২০২০ সালে), রাজ্য সরকারের ‘শিক্ষারত্ন’ পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি।
advertisement
পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়্গপুর গ্রামীণের হিজলি সংলগ্ন কুচলাচাটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সেই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা তনুশ্রী দাস। শিক্ষক দিবসের দিন দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে একটি অনুষ্ঠানে তার হাতে তুলে দেওয়া হবে ‘জাতীয় শিক্ষক পুরস্কার ২০২৫’। তাঁর হাতে সম্মাননা পুরস্কার স্বরূপ রৌপ্য পদকের পাশাপাশি পুরস্কার দেওয়া হবে নগদ ৫০ হাজার টাকা। শিক্ষামন্ত্রকের তরফে চলতি বছর শিক্ষক দিবসে সারা দেশের ৪৫ জন শিক্ষক-শিক্ষিকার হাতে তুলে দেওয়া হবে ‘জাতীয় শিক্ষক পুরস্কার ২০২৫’ (National Teachers Award 2025)। বাংলা থেকে মোট দু’জন এ বছর ‘জাতীয় শিক্ষক পুরস্কার’ পাচ্ছেন। উল্লেখযোগ্য, দু’জনই দিদিমণি। তবে এই নাম প্রকাশের পর বেশ খুশি শিক্ষিকা থেকে বিদ্যালয়ের অন্যান্যরাও। খুশি প্রাথমিক শিক্ষক মহল। ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা তনুশ্রী দাস বলেন, ‘আমি খুব খুশি। যে স্কুলকে নিয়ে এগিয়ে চলা, সেই স্কুলে বসেই সুখবরটা পেলাম। এই কৃতিত্ব আমার ছাত্রছাত্রী, সহকর্মী ও গ্রামবাসীদের।এদের জন্যই এই জায়গায় পৌঁছতে পেরেছি। প্রত্যন্ত এলাকায় অবস্থিত আমাদের স্কুলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পেরেছি। এই পুরস্কার তাই তাঁদেরকেই উৎসর্গ করতে চাই।’
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
প্রসঙ্গত, ১৯৯৯ সাল থেকে শিক্ষকতা করছেন তনুশ্রী দাস। ২০১৬ সালে কুচলাচাটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকার দায়িত্ব পান। ২০২০ সালে ‘শিক্ষারত্ন’ পান তিনি। ২০২২ সালে তাঁর স্কুল কেন্দ্রীয় সরকারের স্বচ্ছ বিদ্যালয় পুরস্কার পায়, ২০২৩ সালেই রাজ্য সরকারের নির্মল বিদ্যালয় পুরস্কার দেয় এই স্কুলকে। অর্থাৎ স্কুলের মুকুটে কৃতিত্বের বহু পালক ইতিমধ্যেই যুক্ত হয়েছে তাঁর হাত ধরে। কুচলাচাটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ান হয়। ছাত্রছাত্রী প্রায় ১৭৫ জন। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা-সহ মোট ছ’জন শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছেন। তবে ছাত্র-ছাত্রীদের ভাবনা এবং তাদেরকে নিয়ে শিক্ষিকার প্রতিদিন যাপন অবাক করবে।
বিদ্যালয় রয়েছে চিলড্রেন্স ব্যাঙ্ক, শুশ্রুষা হাসপাতাল, স্বাবলম্বী কক্ষ থেকে নানা জিনিস। আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকা এই এলাকার ছাত্রছাত্রীরা এখন স্কুলের কাচের আলমারিতে থরে থরে সাজিয়ে রাখে লক্ষ্মীর ভাঁড়। তাতে প্রতিদিন টাকা জমায়।স্কুলের বারান্দায় আছে ‘শুশ্রূষা হাসপাতাল’। আছে একটা ফ্যানের ব্যবস্থাও। হঠাৎ করে কোনও পড়ুয়া, শিক্ষক, শিক্ষিকা বা অভিভাবক অসুস্থ হয়ে পড়লে অন্তত যাতে শুইয়ে দিয়ে সাময়িক স্বস্তি দেওয়া যায়। রয়েছে ‘স্বাবলম্বী কক্ষ’, যেখানে রাখা সেলাই মেশিন। ছোট্ট একটি অডিটোরিয়াম আছে স্কুলে। তাতে টিভি, প্রজেক্টর রাখা। ক্লাসরুমগুলোর নামেও অভিনবত্ব রয়েছে। শুধু তাই নয় দেওয়ালে রয়েছে নানা ছবি। অন্যান্য শিক্ষক শিক্ষিকাদের কথায়, শিক্ষিকা তনুশ্রী দাস সবার কাছেই অনুপ্রেরণা। সন্তান স্নেহের প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রীদের দেখেন এই শিক্ষিকা। তবে তার এই কৃতিত্বে গর্বিত মেদিনীপুর।