গ্রামবাংলার মাটিতে দাঁড়িয়ে আধুনিক কৃষির সফল প্রয়োগ,এই মডেলকেই বিশেষভাবে তুলে ধরা হয় বাপি শেখের কাজের মাধ্যমে। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি রাসায়নিক সারের উপর নির্ভরতা কমিয়ে পরিবেশবান্ধব ও জৈব পদ্ধতিতে চাষের দিকে জোর দিয়েছেন। নিজের বাড়িতেই গরু পালন করেন বাপি শেখ। সেই গরু থেকে পাওয়া গোবর ব্যবহার করেই তিনি নিজস্ব জৈব সার তৈরি করেন, যা তাঁর চাষের জমিতে ব্যবহার হয় নিয়মিতভাবে। এর ফলে যেমন উৎপাদন খরচ কমেছে, তেমনই জমির উর্বরতাও বেড়েছে।
advertisement
সোনার দামে ধসের ইঙ্গিত, একদিনেই বড় পতনের আশঙ্কা! অর্ধেক কমতে পারে রুপোর দাম?
চাষের পাশাপাশি মাছ চাষের সঙ্গেও যুক্ত বাপি শেখ। কৃষি ও মৎস্য এই দুই ক্ষেত্রের সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে তিনি একদিকে জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করেছেন, অন্যদিকে আয়েও এনেছেন স্থায়িত্ব। জানা গিয়েছে,আধুনিক কৃষিযন্ত্রের যথাযথ ব্যবহার এবং বাজারের চাহিদা বুঝে ফসল নির্বাচন,এই দুইয়ের সফল মেলবন্ধনই তাঁর সাফল্যের মূল চাবিকাঠি বলে মত কৃষি বিশেষজ্ঞদের।রবি মরশুমে যেখানে রাজ্যের অধিকাংশ চাষি পাঞ্জাব থেকে আনা আলুবীজের উপর নির্ভরশীল, সেখানে বাপি শেখ নিজেই উন্নতমানের আলুবীজ উৎপাদন করে নজির গড়েছেন।
তাঁর তৈরি আলুবীজ যেমন উৎপাদনে ভালো ফলন দিচ্ছে, তেমনই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বেশি বলেই জানা গিয়েছে।তবে নিজের সাফল্যেই থেমে থাকতে চান না বাপি শেখ। তিনি নিয়মিতভাবে নিজের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান এলাকার অন্যান্য চাষিদের সঙ্গে ভাগ করে নেন। নতুন প্রযুক্তি, উন্নত বীজ, জৈব সার তৈরি কিংবা আধুনিক চাষপদ্ধতি এই সমস্ত বিষয়ে তিনি পাশে দাঁড়ান স্থানীয় কৃষকদের।এর আগেও তাঁর এই উদ্ভাবনী ও টেকসই চাষপদ্ধতির জন্য ‘কৃষকরত্ন’ সহ একাধিক পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন বাপি শেখ। মাস দুয়েক আগে ইন্ডিয়ান এগ্রিকালচার রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তরফে আমন্ত্রণপত্র পান তিনি। পাঞ্জাব, রাজস্থান, বিহার, উত্তরপ্রদেশ সহ দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে দেড়শোরও বেশি সফল চাষিকে ওই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।
গত ২৩ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দেশের নামী কৃষি বিশেষজ্ঞ, গবেষক ও কৃষি বিজ্ঞানীরা। সেখানে আধুনিক কৃষি, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া চাষপদ্ধতি এবং কৃষকের আয় বৃদ্ধির নানা দিক নিয়ে আলোচনা হয়।পুরস্কার গ্রহণের পর বাপি শেখ বলেন,“পশ্চিমবঙ্গ থেকে এ বার আমিই এই পুরস্কার পেয়েছি। দেশের নানা প্রান্তের চাষিদের সামনে আমাদের রাজ্যের চাষের উন্নতির পথ কী হতে পারে, তা তুলে ধরার সুযোগ পেয়েছি,এটাই আমার কাছে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।”
তিনি আরও জানান, এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন রাজ্যের চাষিদের অভিজ্ঞতা থেকে বহু নতুন বিষয় শিখেছেন তিনি, যা ভবিষ্যতে নিজের চাষের পাশাপাশি এলাকার অন্যান্য কৃষকদের উপকারে লাগবে। গ্রামবাংলার এক সাধারণ চাষি থেকে জাতীয় স্তরে স্বীকৃতি,বাপি শেখের এই সাফল্য আজ শুধু তাঁর ব্যক্তিগত অর্জন নয়, বরং পূর্ব বর্ধমান জেলার কৃষকদের জন্যও এক অনুপ্রেরণার গল্প।
