সারা দেশ জুড়ে সাড়ম্বরে পালিত হল কালীপুজো ও দীপাবলী। আলোর এই উৎসবে সামিল হয়েছিলেন কম বেশি সকলেই। এই রাজ্যেও বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে অসংখ্য কালী সাধনস্থল। সেই প্রতিটি জায়গার রয়েছে নিজস্ব কিছু রীতি রেওয়াজ, কিছু বৈশিষ্ট্য। তেমনি পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়া ২ ব্লকের মুস্থূলীর মা বোলতলা কালী। পুজো কমিটির সম্পাদক উজ্বল মুখার্জি বলেন, পাটকাঠির মশালের আলোয় মায়ের বিসর্জন হয়, এটাই আমাদের এখানকার ঐতিহ্য। বহু বছর ধরে এটাই হয়ে আসছে। আজ অবধি কোনও রকম অঘটন ঘটেনি।”
advertisement
আরও পড়ুন : আবার অপেক্ষার একবছর! ফিরে যাবেন বড় মা, ২১ ফুটের প্রতিমার নিরঞ্জন হয় কীভাবে, জানলে চমকে যাবেন
অন্যান্য বছরের মতো এই বছরেও শতাব্দীপ্রাচীন এই পুজো আজও সমান উৎসাহের সঙ্গে সম্পন্ন হয়েছে। এই দেবীর বিসর্জন যাত্রা কার্যত লোমহর্ষক। সোশ্যাল মিডিয়াতেও বর্তমানে তা ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। দেবী কালী এখানে পূজিতা হন ‘মা বোলতলা কালী’ নামে। এই পুজো পরিচালনার দায়িত্বে থাকে পুজো ট্রাস্ট। ট্রাস্ট ও গ্রামবাসীর সম্মিলিত উদ্যোগে এবছরও একই নিষ্ঠায় অনুষ্ঠিত হল এই কালী আরাধনা। মুস্থূলী গ্রামের এই মন্দিরে তন্ত্রমতে হয় দেবীর পুজো। দীপান্বিতা অমাবস্যার দুপুরে শুরু হয় সিঁদুরখেলার বিশেষ পর্ব।
প্রায় ১১ ফুট উচ্চতার এই কালী প্রতিমাকে সাজিয়ে তোলা হয়েছিল সোনা ও রুপোর গয়নায়। তবে এই পুজোর আসল আকর্ষণ দেবীর বিসর্জনের রীতি। বিসর্জনের মুহূর্তে গোটা গ্রাম যেন অন্য জগতের রূপ নেয়। প্রসঙ্গত, বিসর্জন যাত্রা বেরোনোর আগে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয় গোটা গ্রামে। আলোর উৎস বলতে একমাত্র থাকে ওই পাটকাঠির মশাল। আর সেই দৃশ্যের সাক্ষী থাকতে মঙ্গলবার এই গ্রামে দূরদূরান্ত থেকে ছুটে এসেছিলেন অসংখ্য মানুষ। তাদের অনেকেই ক্যামেরাবন্দী করছিলেন এই বিশেষ মুহূর্তটিকে।
গ্রামবাসী জয়ন্ত মাঝি বলেন, “ছোট থেকেই দেখে আসছি পাটকাঠির মশালের আলোয় বিসর্জন হতে। মায়ের কৃপা আর মহিমার জন্য আমাদের মশালের আগুনে কিছুই হয়না।”প্রাচীন প্রথা মেনে, এখানে দেবীর সঙ্গে দৌড়ায় সারি সারি মশালের আলো। প্রতিধ্বনিত হয় ‘জয় মা কালী’ ধ্বনি। স্থানীয়দের বিশ্বাস, মা বোলতলা কালীকে হেঁটে নিয়ে যাওয়া যায় না, তাঁকে কাঁধে তুলে দৌড়ে নিয়ে যাওয়াই এই পুজোর নিয়ম।
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
প্রতিমা নিয়ে যাওয়া হয় পাশের গ্রাম আমডাঙ্গায়। যেখানে অবস্থান করছেন বুড়ো শিব। দেবী ও শিবের ‘দর্শন’ পর্ব সম্পন্ন হয়। পরে একইভাবে দৌড়ে দেবীকে ফিরিয়ে আনা হয় মুস্থুলী গ্রামে এবং মন্দির সংলগ্ন পুকুরে সম্পন্ন হয় প্রতিমা বিসর্জনের আচার। শতাব্দী পেরিয়েও এই রীতিনীতি, বিশ্বাস আর ভক্তির আবেগ আজও অটুট রয়েছে। যা এক একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানের গণ্ডি পেরিয়ে করে তুলেছে গ্রামীণ ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির এক জীবন্ত প্রতীক।