কথিত আছে, একদিন সাধক তন্ত্রসাধনার সময় এক শিশুকে বলি দিতে উদ্যত হন। খবরটি ছড়িয়ে পড়তেই এলাকাবাসীর প্রতিবাদে সাধক পালিয়ে যান। কিন্তু তাঁর রেখে যাওয়া মায়ের সাধনার স্থানে ধীরে ধীরে জনমানসে জন্ম নেয় ভক্তির আবেগ। পরে স্থানীয়দের উদ্যোগে এক প্রভাবশালী ব্যক্তি নিয়মিতভাবে পুজো শুরু করেন। কিছুদিন পর ওই ব্যক্তির জীবনেও অসৎ কাজ প্রবেশ করায় মন্দিরের সুনাম কলঙ্কিত হয়। তখন স্থানীয়রা সিদ্ধান্ত নেন, মন্দিরের পুজো ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব একজন নির্ভরযোগ্য পুরোহিতের হাতে তুলে দেওয়া হবে। সেই সময় থেকেই মা শ্মশান কালীর আরাধনা শুরু হয় নিয়ম-ভক্তির সঙ্গে, যা আজও অব্যাহত রয়েছে।
advertisement
আরও পড়ুন: দীপাবলি শুধু উৎসব নয়, এইসব পড়ুয়াদের পড়াশোনার খরচ জোগাতে ভরসা দীপাবলিও! জানুন কীভাবে
শুরুতে এখানে ছিল শুধু একটি কুঁড়েঘর। পুজোর দিনে জ্বলে উঠত প্রদীপ, ধূপকাঠি, আর ভক্তদের পদচারণায় মুখরিত হত চারদিক। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মন্দিরের প্রতি মানুষের বিশ্বাস আরও গভীর হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তা ও দানের ফলে প্রায় ৫০ বছর আগে কুঁড়েঘরের পরিবর্তে নির্মিত হয় বর্তমানের কংক্রিটের মন্দির। লাল-হলুদ রঙে সজ্জিত এই মন্দিরের শিখর আজ শান্তি ও ভক্তির প্রতীক। শিখরের অলংকরণ আর মন্দির চত্বরে ভক্তিমূলক পরিবেশ দর্শনার্থীদের মনে জাগিয়ে তোলে এক পবিত্র অনুভূতি।
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
প্রতি বছর কালীপুজোর সময় পূর্ব মেদিনীপুরের এই মন্দির ঘিরে উন্মাদনা তুঙ্গে ওঠে। এগরা শহর ছাড়াও দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজারও ভক্ত ভিড় জমান মা শ্মশান কালীর দর্শনে। পুজোর দিন সকাল থেকেই লাইন পড়ে যায় মন্দির চত্বরে। পুজোর শেষে অনুষ্ঠিত হয় আরতি ও প্রসাদ বিতরণ। স্থানীয়রা বিশ্বাস করেন, মা শ্মশান কালী সকল বিপদ দূর করে মনের কামনা পূর্ণ করেন।
আজ দুই শতাব্দী পেরিয়েও এগরার শ্মশান কালী মন্দির কেবল একটি ধর্মীয় কেন্দ্র নয়, এটি হয়ে উঠেছে শহরের ঐতিহ্য, ইতিহাস ও বিশ্বাসের প্রতীক। দিঘার রাস্তায় গড়ে ওঠা এই মন্দিরের প্রতিটি ইট যেন সাক্ষী হয়ে আছে সময়ের পরিবর্তনের, অথচ অটুট রয়েছে ভক্তির আবেগ। তাই আজও যখন মন্দিরে বাজে ঢাক-ঢোল, তখন মনে হয় ২০০ বছরের পুরোনো সেই সাধকের তপস্যা যেন ফিরে এসেছে সময়ের স্রোত বেয়ে।