আরও পড়ুন: চাঁদার জুলুম নয়, এখানে গাড়ি থামিয়ে দেওয়া হচ্ছে প্রসাদ
কথিত আছে মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র রায় দেবী জগদ্ধাত্রীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে প্রথম রাজবাড়িতে দেবীর পুজো শুরু করেন। দেবীর পুজোর মাহাত্ম্য প্রচারের জন্য তিনি পরবর্তীকালে তাঁর লেঠেলদের সহযোগিতায় হাতিশালাতেও জগদ্ধাত্রী পুজো করেছিলেন। ৩০০ বছর আগে স্বয়ং মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের নামে এই পুজোর সংকল্প হয়েছিল। সেই রীতি বজায় রেখে আজও মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের নামেই এই পুজোর সংকল্প হয়। পুজোর কদিন কোনরকম বাদ্যযন্ত্র বা মাইক বাজে না এখানে।
advertisement
দেবীর নির্দেশে মহারাজ একদিনে তিন পুজো করেছিলেন বলে এখনও পর্যন্ত পুরোহিত একই দিনে দেবীর সপ্তমী,অষ্টমী, নবমীর পুজো করেন। ঊষাকালে পুরোহিত দেবীর পুজোয় বসেন এবং তা শেষ হতে হতে প্রায় রাত্রি হয়ে যায়। এই পুজো করে থাকেন শান্তিপুরের স্বনামধন্য পুরোহিত শ্রী সব্যসাচী পাঠক মহাশয়। তিনি বংশ পরম্পরায় এই পুজো করে থাকেন। দেবীর রূপ এখানে পীতবর্ণা, ত্রিনয়না, চর্তুভূজা, সিংহবাহিনী এবং দেবীর পদতলে শায়িত করিন্দ্রাষুরের ছিন্ন মস্তক ।
এই বারোয়ারীর প্রধান বৈশিষ্ট্য, দেবীর পিছনের চালচিত্র। তা পাড়ার সকল যুবক মিলে বহুদিন ধরে তৈরি করে। দেবীর সামনে ইক্ষু, কলা ও কুস্মান্ড বলি দেওয়া হয়। এ ছাড়াও যতক্ষণ পুজো চলে ততক্ষণ (প্রায় ১৫-১৬ ঘণ্টা) দেবীর হোমকুন্ডে হোম সম্পাদিত হয়। এখানে দেবীর ভোগে খিচুড়ি, চচ্চরি, পুষ্পান্ন, পরমান্ন, বিভিন্ন ভাজা, চাটনী, মিষ্টি ইত্যাদি দেওয়া হয়। এক দিনে তিন পুজোয় তিনবার ভোগ নিবেদন করা হয়। এ ছাড়াও দেবীর চন্ডীপাঠ অনুষ্ঠান হয়। বহু দূর দূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসে নিজস্ব মনোবাঞ্ছা পুরোনের আশায়।
আরও খবর পড়তে ফলো করুন:
https://whatsapp.com/channel/0029VaA776LIN9is56YiLj3F
এখানে দেবী জগদ্ধাত্রীকে মানুষ বড়মা বলে ডেকে থাকে। এই দেবীর অনুরূপ আরও একটি জগদ্ধাত্রী মায়ের মূর্তি আছে, তিনি শান্তিপূর সূত্রাগড় অঞ্চলের ছোটমা নামে খ্যাত। প্রতি বছর ছোটমা নিরঞ্জনের পূর্বে বড়মা-কে দেখতে আসেন। একাদশী তিথিতে দেবীর নিরঞ্জন হয়। আগে মুর্শিদাবাদ থেকে বেয়ারারা কাঁধে করে নিরঞ্জন করত। কিন্তু এখন তা আর সম্ভব হয় না। এখন ট্রাকটরে করে নিয়ে গিয়ে বির্সজন হয়। এই পীরের হাট অঞ্চলের মধ্যে একটি প্রকান্ড তেঁতুল গাছ আছে। রীতি অনুযায়ী নিরঞ্জনের পূর্বে দেবীকে মন্দির থেকে বার করে ওই তেঁতুল তলায় বিশ্রাম দেওয়া হয়। পরে বাজনা, আলোর রোশনাই সহযোগে দেবীর নিরঞ্জন সম্পূর্ণ হয়।
মৈনাক দেবনাথ