গ্রামবাসীরা জানান, মায়ের নিত্যপুজোর জন্য গ্রামে নিয়ে আসা হয়েছিল ভট্টাচার্য পরিবারকে। তাঁদের বংশধররা আজও পুজো চালিয়ে আসছেন। পুজোর প্রধান উদ্যোক্তা অমিতাভ চট্টোপাধ্যায় বলেন, দেখুড়িয়া গ্রামে একসময় তেজচন্দ্র রায়, সতীশ রায়দের পূর্বপুরুষেরা এখানে জমিদারি শুরু করেছিলেন। গ্রামে শান্তি ও সমৃদ্ধি ফেরাতে তাঁরাই জগদ্ধাত্রী পুজোর সূচনা করেছিলেন। তখনই পুজোপাঠ করার জন্য সত্যঞ্জিব ভট্টাচার্য নামে এক পুরোহিতকে গ্রামে নিয়ে আসেন জমিদাররা। শুরু হয় গ্রামে জগদ্ধাত্রী পুজো।
advertisement
আরও পড়ুন: সুন্দরবনকে রক্ষার আর্তি ফুটে উঠল বালিতে
মা জগদ্ধাত্রীকে ইষ্ট দেবতা হিসাবে পুজো করেন গ্রামবাসীরা। তার পরই গ্রামে শুরু হয় কালী পুজো। মা কালীকে গ্রাম্যদেবী রূপে পুজো করেন এখানকার বাসিন্দারা। পুজোর জন্য জমি দান করে গিয়েছিলেন পুজোর প্রতিষ্ঠাতা। কিন্তু কালক্রমে সেই জমির বেশ কিছু অংশ বেহাত হয়ে গিয়েছে। তাই এখন পুজো হয় সবার সাহায্যে। বর্তমানে পুজো কমিটির অন্যতম উদ্যোক্তা সৌমব্রত রায়, পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, ময়ূখ চট্টোপাধ্যায়, পার্থ সারথি মুখোপাধ্যায়রা জানান, প্রাচীন রীতি মেনে এখানে শুধুমাত্র নবমীর দিন পুজো করা হয়। ওইদিনই সপ্তমী, অষ্টমী এবং নবমীর পুজো হয়। যেহেতু দ্বারকা নদী উত্তরদিকে বয়ে চলেছে, তাই দ্বারকা নদীর জল গঙ্গার সমান পবিত্র বলে বিশ্বাস মানুষের। মঙ্গলবার ভোরের দিকে সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে কাঁসর, ঘণ্টা, ঢাক ঢোল নিয়ে গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া দ্বারকা নদী থেকে সুসজ্জিত ঘট ভরে আনা হয়। বলিদান প্রথা আজও রয়ে গিয়েছে এখানে। অন্যান্য বারের মত এবারেও সন্ধেত হাজার পাঁচেক মানুষের মধ্যে পুজোর ভোগ বিতরণ করা হয়। দশমীর সন্ধেয় মাকে গ্রাম ঘুরিয়ে নিরঞ্জন দেওয়া হবে বড় পুকুরে। এটাই এই পুজোর রীতি।
এই পুজোয় অংশগ্রহণ করে পার্শ্ববর্তী উদয়পুর, বলরামপুর, কাঁদা, কামাখ্যা, সাতঘড়িয়া সহ আট-দশটি গ্রামের মানুষ। তারাপীঠের সেবাইত থেকে রামপুরহাট শহরের মানুষও পুজোয় অংশগ্রহণ করেন। স্থানীয়দের বিশ্বাস গ্রামের ইষ্ট দেবীর কাছে মানত করলে তা পূরণ হয়। সেই বিশ্বাসে বহু মানুষ মায়ের কাছে মানসিক করে পুজোয় অংশগ্রহণ করেন। কেউ কেউ প্রতিমা দেওয়ার অঙ্গীকারও করে থাকেন। সেই মত এবার কাটোয়ার বনকাপাসির বাসিন্দা পল্লবী বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিমা দিয়েছেন। প্রতিমা তৈরি করেছেন রাপুরহাটের শিল্পী অঙ্কন শর্মা। পুজো উপলক্ষ্যে গ্রামে মেলা বসে। কর্মসূত্রে কিংবা বিবাহ সূত্রে গ্রামের বাইরে থাকা মেয়ে কিংবা পুরুষরা জগদ্ধাত্রী পুজোয় গ্রামে ফেরেন। পুজোয় তাঁদের অংশগ্রহণ গ্রামে মিলন উৎসবের চেহারা নেয়।
সৌভিক রায়