ঘট বিসর্জন, প্রতিমা বিসর্জনে সাং প্রথা এবং প্রতিমা রাজবাড়ি প্রদক্ষিনের ঐতিহ্য বজায় রাখতে পথে নামল শহরের হাজার হাজার বাসিন্দা। সকলেরই দাবি, শহরের ঐতিহ্য নষ্ট করা যাবে না। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রাচীন শহরের একেবারে প্রাণকেন্দ্র পোস্ট অফিস মোড়ে হাজার হাজার বিক্ষুব্ধ শহরবাসী ভিড় জমাতে শুরু করেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই তা জনসমুদ্রের আকার নেয়। যার জেরে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে কৃষ্ণনগরের রাজপথ। কয়েক ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও সেই বিক্ষোভ এখনও চলছে। হাতে পোস্টার নিয়ে বিভিন্ন পেশা, বিভিন্ন বয়সের মানুষের দিন এটাই দাবি ছিল প্রাচীন শহরের প্রাচীন ঐতিহ্য বজায় রাখতে সাহায্য করুক জেলা প্রশাসন।
advertisement
আরও পড়ুন: জগদ্ধাত্রী পুজোয় রাতে ঠাকুর দেখায় ছাড়, চন্দননগর ও কৃষ্ণনগরবাসীকে মুখ্যমন্ত্রীর উপহার
এ দিন যারা জমায়েতে অংশ নিয়েছিলেন তাঁদের মতে, প্রতিমা (Krishnagar Jagadhatri Puja 2021) রাজবাড়ি নিয়ে যেতে না দিলেও মানুষের মধ্যে যে উদ্দীপনা, তাতে ভাটা পড়বে না। বরং যে ভিড় রাজবাড়ি থেকে জলঙ্গীর ঘাট পর্যন্ত ছড়িয়ে থাকে, সেই ভিড় পোস্ট অফিস মোড় থেকে জলঙ্গীর ঘাটের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে যাবে, তাতে পা পর্যন্ত ফেলার জায়গা থাকবে না। কারণ সব প্রতিমা যেহেতু রাজবাড়ি নিয়ে যাওয়ার প্রথা রয়েছে, তাই মানুষ নিজেদের সুবিধামতো জায়গায় দাঁড়াতে পছন্দ করেন। এ ক্ষেত্রে তা হবে না, ফলে ভিড় বাড়বে। অন্যদিকে, সারা রাস্তায় ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা এই সময়ে নানা সামগ্রীর দোকান করেন সামান্য লাভের আশায়। কিন্তু প্রতিমা রাজবাড়ি যেতে না দিলে পোস্ট অফিস মোড় থেকে রাজবাড়ি পর্যন্ত যারা দোকান দেন, তাদের ব্যবসা একেবারে মার খাবে। আর সর্বোপরি ঐতিহ্য হারানোর বিষয় তো থেকেই যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: শ্রীভূমির মণ্ডপ দেখা হয়নি? 'বুর্জ খলিফা' কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পুজোতেও! যাবেন নাকি?
প্রসঙ্গত, কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী (Krishnagar Jagadhatri Puja 2021) পুজোর অন্যতম আকর্ষণ বিসর্জনের শোভাযাত্রা। শহরের বড় বড় পুজোগুলির ঘট বিসর্জন হয় সকালে। সন্ধ্যের পর থেকে শুরু হয়ে যায় সাঙে করে ঠাকুর ভাসানের পর্ব। কৃষ্ণনগর তো বটেই, এমনকি দূর দূরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীরা সারারাত জেগে রাজপথে দাঁড়িয়ে বা বসে বিসর্জন দেখেন। ভোর রাতে মেজমা, ছোটমা ও বুড়িমার দর্শন করে তবে তাঁরা ঘরে ফেরেন। প্রথা অনুযায়ী, সব পাড়ার ঠাকুর বেহারাদের কাঁধে চেপে আগে কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির সামনে যায়। তারপর শহরের রাজপথ ধরে জলঙ্গি নদীর উদ্দেশ্যে যাত্রা করে।
কিন্তু কেন এই রীতি? কথিত আছে, কৃষ্ণনগরের রাজপরিবারের মহিলা সদস্যরা বাড়ির বাইরে বেরিয়ে প্রতিমা দর্শন করার অনুমতি পেতেন না। তাঁরাও যাতে ঠাকুর দেখার সুযোগ পান সেই জন্য রাজ পরিবার শুরু করে এক নিয়ম। ঠিক করা হয়, সমস্ত ঠাকুর আগে রাজবাড়ি প্রদক্ষিণ করবে, তারপর জলঙ্গি নদীতে বিসর্জন হবে। রাজবাড়ি ঘোরার সময় মহিলা সদস্যরা বারান্দায় দাঁড়িয়ে সেই ঠাকুর দেখতেন। আজও সেই নিয়ম আড়ম্বরের সঙ্গে পালন হয়ে আসছে। সেই নিয়মে ছেদ তাই মেনে নিতে না পেরে ক্ষোভে ফুঁসছেন আট থেকে আশি।