সমাজে টিকে থাকতে গেলে শিক্ষার প্রয়োজন অগাধ। তবে বর্তমান সময়েও বহু শিশুর জীবনে লেখাপড়ার কোনও বালাই নেই। হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরে এমনই একটি ইটভাটা রয়েছে, যেখানে বাবা-মায়ের সঙ্গে ধুলোকাদা মেখেই জীবন কাটাচ্ছে শতাধিক শিশু। সেই সমস্ত শিশুর জীবনে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতেই কয়েকজন স্কুল পড়ুয়া মিলে ইটভাটায় শুরু করেছিল স্কুল।
advertisement
আরও পড়ুনঃ ৬ মাসের কোর্সে ব্যবসার খুঁটিনাটি! মহিলাদের কাছে দারুণ সুযোগ, সঠিক শিক্ষায় খুলে যেতে পারে ভাগ্য
ইটভাটার স্কুলে সপ্তাহে তিন দিন পঠনপাঠন চলে। শুরুতে করতে হয়েছে কঠিন লড়াই। যারা শিক্ষার কদর বোঝে না, তাঁদের ছেলেমেয়েদের দু-চার ঘণ্টা খাতা পেন, হাতে বসিয়ে রেখে শিক্ষিত করার চেষ্টা, দুঃস্বপ্নই বটে! যাদের শিক্ষিত করতে স্কুল, তাঁদের স্কুলে আনতে ইটের টুকরোর আঘাত সহ্য করতে হয়েছে উদ্যোগী পড়ুয়াদের। কিন্তু কোনও কিছুতেই পিছুপা হননি তাঁরা। এভাবে এক এক করে কয়েক মাস পার হয়ে যায়। আস্তে আস্তে ইট ভাটায় থাকা প্রায় শতাধিক শিশু স্কুলে নিয়মিত আসা শুরু করে।
বর্তমানে প্রায় ৭০ জন ছেলেমেয়ে ইটভাটার এই স্কুলে লেখাপড়া করছে। প্রতিবছর ৬-৮ মাস ভিনরাজ্য থেকে বহু পরিযায়ী শ্রমিক হাওড়ার ইটভাটাগুলিতে কাজে আসেন। সেই রকমই একটি ইটভাটায় কাজ করা পরিবারের শিশুদের নিয়েই তুষার, অভীকদের তরুণোদয় ফাউন্ডেশনের স্কুল।
এই বিদ্যালয়ে একজন শিক্ষিকা নিয়োগ করা হয়েছে। যিনি নিয়ম করে সপ্তাহে ৩ দিন স্কুলে পড়ান। বিদ্যালয়ের নিয়মে এখানে লেখাপড়া চলে। সেই সঙ্গেই ব্যায়াম, ছবি আঁকার মতো বিভিন্ন প্রশিক্ষণও এবার শুরু হচ্ছে। স্কুলে আসা এবং লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ বাড়াতে খাবার সহ নানা জিনিসের মাধ্যমে পড়ুয়াদের আগ্রহ বাড়ানোর চেষ্টা থাকে সর্বদা।
এই প্রসঙ্গে তুষার পাঠক এবং অভীক হাজরা জানান, সারা বছরে ৬-৮ মাস স্কুল চলে। বর্ষার সময় পরিযায়ী শ্রমিকরা তাঁদের বাড়ি ফিরে যান। সেই সময় স্কুল বন্ধ। তারপর বর্ষা শেষ হলে আবার ভিনরাজ্য থেকে পরিযায়ী শ্রমিকরা আসেন। তবে প্রতি বছর এক পরিবার আসে না, তাই বছর বছর নতুন ছাত্র হাজির হয় এই স্কুলে।
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
পরিযায়ী শ্রমিক পরিবারের শিশুদের ন্যূনতম শিক্ষা দেওয়াই সংকল্প অভীক-তুষারদের। কয়েক বছর পেরিয়ে সেই লক্ষ্য সফলতার দিকে। শুরুতে কয়েকজন পড়ুয়া মিলে স্কুলের সূচনা হলেও বর্তমানে অনেকেই এগিয়ে এসেছেন। ইটভাটার মালিক কর্তৃপক্ষও শিশুদের শিক্ষাদানে সহযোগিতা করায় এতদূর এগিয়ে যাওয়া বলে জানান উদ্যোগীরা। একইসঙ্গে বলেন, এই স্কুলকে আরও সুন্দরভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে সকলের সহযোগিতা কাম্য।





