এই বাংলার মানুষের কাছে চা এর কদর অন্য মাত্রায়। চা এর প্রতি অন্যরকম টান মানুষের। আর সেই দিক গুরুত্ব রেখেই সেকাল একাল ধরে চায়ের সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছে বহু মানুষের জীবন জীবিকা। চা বিক্রেতা বা চা ব্যবসা নিয়ে একসময় সাধারণ মানুষের যে ধারণা ছিল। বর্তমান সময়ে সেই ধারণা অনেকখানি বদল হয়েছে।চা- এ চর্চা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে, একজন সাধারণ চা বিক্রেতা থেকে দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে ওঠার গল্প।
advertisement
সাদামাটা ধারণা থেকে বেরিয়ে বর্তমান যুগ উপযোগী চা ব্যবসায় ঘটেছে আমূল পরিবর্তন। এক শ্রেণীর মানুষের চাহিদার উপর গুরুত্ব দিয়ে চা – এ অভিনবত্ব। আর এর মধ্যেই নতুন প্রজন্মের একাংশ সাফল্য খুঁজে পেয়েছে। চাহিদা উপযোগী চা ব্যবসা করে, মোটা বেতনের চাকরির থেকেও সাফল্য মিলতে পারে বলেই মনে করেন অনেকে।তাদের মধ্যেই অন্যতম হাওড়ার মৃগাঙ্ক খাঁড়া। মাত্র দেড় বছর সময়ে ব্যবসায় দারুণ সাফল্য পেয়েছে সে। ইতিমধ্যেই দ্বিতীয় স্টল খুলেছেন। লক্ষ্য রয়েছে তাঁর ‘মিস্টার মিডিল ক্লাস চা ওয়ালা ‘ এই ব্র্যান্ডকে আরও বিস্তৃত করা।
শৈশব থেকে একজন মেধা ছাত্র। স্কুলে সর্বদা এক থেকে তিনের মধ্যেই র্যাঙ্ক । কুইজ কম্পিটিশনেও বেশ সাফল্য। একের পর এক সাফল্য শৈশব থেকে মেডেল মেমেন্টো সার্টিফিকেট পেতে পেতে অর্ধেক ঘর ভর্তি। জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা মাধ্যমিকেও ভাল ফল। কয়েক জেনারেশন ধরে চাকরির সঙ্গে যুক্ত পরিবার। ঠাকুরদা রেলের চাকরি বাবাও চাকরিজীবী। শৈশব থেকেই দারুণ মেধাবী, ছেলে ডাক্তার হবে এমন আশা করেছিল বাবা-মা। সেই মত প্রস্তুতিও চলছিল পরিবারে। এরমধ্যেই পাঁচলার জুজারসাহা পিএন মান্না স্কুল থেকে স্কুল পাস করে। উলুবেড়িয়া কলেজ থেকে ইংরেজিতে স্নাতক। কলেজ পাশ করে, বিভিন্ন বই সংগ্রহ করে নিজেকে আরও বেশি পরিণত করার পাশপাশি টিউশন, স্পোকেন ইংলিশ ও কম্পারেটিভ পড়ানো শুরু করে। সেখান থেকেও উপার্জন মন্দ না। তারপর চাকরিতে যুক্ত হওয়া। সব মিলিয়ে ভাল উপার্জন হলেও চাকরিতে তার মন বসেনি। এরপর নিজে কিছু করার চেষ্টা চালিয়েছে।
কখনও তৈরি খাবার বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেবার অ্যাপ এর মাধ্যমে ব্যবসা করার চেষ্টা। আবার কখনও ঝাল মুড়ি এবং টি-শার্ট বিক্রির ব্যবসা। যদিও সেসব কাজে সেভাবে সফলতা মেলেনি। তবে হার মানেনি সে, আবার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে। চাকরি করতে করতে ২৪ বছর বয়সে শুরু হয় চা বিক্রির ব্যবসা। এর কয়েক মাস পর পুরোপুরি চাকরি ছেড়ে চা বিক্রি শুরু করে মৃগাঙ্ক। ন্যায্য মূল্যে ভাল স্বাদের চা ও স্ন্যাকস পরিবেশনের পাশপাশি বিভিন্ন ভাবে ক্রেতাদের মন অর্জন করার চেষ্টা করেছে। ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা বাড়ে। সারা জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তার স্টলে চা খাওয়ার আগ্রহ দেখায় মানুষ। এখানেই থেমে নেই, আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে যেতে ‘মিস্টার মিডিল ক্লাস চা ‘ এর একাধিক আউটলেট খোলার লক্ষ্যে দ্বিতীয় স্টল খুলে ফেলেছেন ইংরেজিতে স্নাতক মৃগাঙ্ক খাঁড়া।
প্রথম চা কাউন্টার বা স্টল তার বাড়ি থেকে সামান্য দূরত্বে জগৎবল্লভপুরের খাঁদারঘাট। কয়েক মাস আগে দ্বিতীয় ‘মিস্টার মিডিল ক্লাস চা ওয়ালা ‘ স্টল সাঁকরাইলের আড়গোড়ীতে। অল্প দিনে দারুন জনপ্রিয়তা। বিভিন্ন ফ্লেভার চা’য়ের সঙ্গে ভিন্ন স্নাক্স এবং মকটেল রয়েছে। । চা মাত্র ৭ টাকা থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত। চা ছাড়াও অন্যান্য জিনিসেরও দাম মধ্যবিত্তের নাগালের মধ্যে
এ প্রসঙ্গে চা মৃগাঙ্ক খাঁড়া জানান, কোনও কাজই ছোট নয়। মেধা হলে চাকরি করবে আর মেধা না হলে ব্যবসা করবে। সাধারণের মধ্যে এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল বলে মনে করি। একজন মেধা এবং শিক্ষিত যদি ব্যবসার দিকে অগ্রসর হয় তাহলে সফলতা হবার সম্ভাবনা অনেক বেশি। চাকরির থেকে হয়ত ব্যবসায় ঝুঁকি বেশি। তবে যারা নিজে কিছু করার স্বপ্ন দেখেন তারা পরিকল্পিত ভাবে ব্যবসা করতেই পারেন। তাদের কাছে মোটা মাইনের চাকরির থেকে কয়েক গুণ বেশি তৃপ্তির ব্যবসা।
রাকেশ মাইতি