কথিত আছে, তৎকালীন ফরাসিদের দেওয়ান ছিলেন ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী। তিনি ছিলেন নদিয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের খুবই ঘনিষ্ঠ বন্ধু। নবাব আলিবর্দির রাজত্বকালে মহাবদজঙ্গ রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের কাছে ১২ লক্ষ টাকা নজরানা দাবি করেন। নজরানা দিতে অক্ষম হলে নবাব রাজাকে বন্দি করে মুর্শিদাবাদে (মতান্তরে মুঙ্গেরে) নিয়ে যান। কারাবন্দী থাকার কারণে দুর্গাপুজো করতে পারেননি রাজা। কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ার পর বিজয়া দশমীর দিনে নৌকায় ফেরার পথে তিনি সিংহবাহনী এক দেবীর স্বপ্নাদেশ পান। তাঁকে নির্দেশ দেওয়া হয় কার্তিক শুক্লা নবমীর সময় জগদ্ধাত্রী দেবীর পুজোর আয়োজন করার জন্য।
advertisement
আরও পড়ুনঃ অনুব্রত মণ্ডলের কালীপুজোয় বিরাট চমক! প্রতিহিংসা ভুলে দায়িত্ব কাঁধে নিলেন এই ব্যক্তি! কে তিনি?
সেই মতো চন্দননগরের গঙ্গাপাড়ের নিচু পট্টি চাউল পট্টি এলাকায় নৌকা থামিয়ে এই পুজোর আয়োজন করেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র ও ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী দু’জন মিলে। অল্প সময়ে মধ্যে পুজো আয়োজন করার জন্য মহিলাদের বাদ দিয়ে চালের পট্টি এলাকার সমস্ত ব্যবসায়ীরা এগিয়ে আসেন পুজোর জন্য। শুরু হয় প্রথম জগদ্ধাত্রী পুজোর। শোনা যায় পরের বছর থেকে এই রাজা কৃষ্ণচন্দ্র দেবী প্রতিমার আরাধনা শুরু করেন নিজের রাজ বাড়িতেও।
প্রাচীন রীতি মেনেই আজও হয় ৩৫০ বছরের পুরাতন চাউলপট্টির জগদ্ধাত্রী পুজো। এখনও প্রাচীন রীতিনীতি মেনেই এলাকার সমস্ত পুরুষরা মিলে করেন এই পুজোর আয়োজন। চার দিনব্যাপী চলে দেবী হৈমন্তিকার আরাধনা। পুজোর যে সমস্ত ফল প্রসাদ আসে সেগুলিকে পুজো উদ্যোগ দ্বারা বিলিয়ে দেন গরীব দুঃস্থ মানুষদের মধ্যে এবং বাকি নিয়ে যাওয়া হয় সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও হাসপাতালগুলিতে রোগীদের দেওয়ার জন্য।
জগদ্ধাত্রী পুজোর জন্য বিখ্যাত চন্দননগর। চন্দননগরের গঙ্গাপাড়ের প্রথম পুজো চাউলপট্টির জগদ্ধাত্রী পুজো। ১৭৬২ সালে আনুমানিক শুরু হয় এই পুজোর। জাঁকজমকপূর্ণভাবে বড় বড় প্রতিমার পুজো হয় গোটা চন্দননগর জুড়ে। আর মাত্র কয়েকটা দিনের অপেক্ষা, তারপরেই আপামর জনগণ মেতে উঠবেন জগদ্ধাত্রী পুজোর আনন্দে।
রাহী হালদার