বেশ কয়েক বছর আগে রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পেয়েছেন পুষ্পরাণী। দিল্লি গিয়ে রাষ্ট্রপতির হাত থেকে সম্মাননা গ্রহণ করেছেন গ্রামের মহিলা হয়ে। বাড়িতে এখনও সাজানো রয়েছে তাঁর পুরষ্কার নেওয়ার স্বর্ণমুহূর্তের ছবি। মাদুরশিল্পী হিসেবেই এই সম্মাননা জুটেছিল বৃদ্ধার। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার প্রত্যন্ত গ্রামের এই মাদুরশিল্পী দেশের দরবারে নিজেকে তুলে ধরেছিলেন।
এখন কেমন আছেন তিনি? বয়স প্রায় সত্তর পুষ্পরাণীর। সেই তুলনায় আরও বেশি বয়স্ক দেখায় তাঁকে। কিন্তু ৪০ বছর আগের সুখস্মৃতি আজও তাঁর চোখের সামনে ভাসে। রাষ্ট্রপতির হাত থেকে পুরস্কার নেওয়ার মুহূর্ত যেন কোনওদিনই ভোলার নয়। হাতের জাদুর গুণেই সম্মানিত হয়েছিলেন পুষ্পরাণী। তিনি তখন গৃহবধূ। যদিও শিল্পসত্তা তাঁকে সব সময়েই অনন্যসাধারণ করে রেখেছিল। তাই তো পশ্চিম মেদিনীপুরের এক প্রত্যন্ত গ্রাম থেকেও নজরে এসেছিলেন তিনি। জেলা ছাড়িয়ে রাজ্য, রাজ্য ছাড়িয়ে দেশের কাছে উজ্জ্বল করেছে গ্রামের নাম, গ্রামের মাদুরশিল্পের নাম।
advertisement
তথাকথিত মাদুর বুনে নয়, মাদুরকাঠি থেকে সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম আঁশ বের করে মসলন্দ মাদুর বুনেছেন পুষ্পরাণী। তাতেই পেয়েছেন স্বীকৃতি। ১৯৮০ সালে তৎকালীন ভারতের রাষ্ট্রপতি নিলম সঞ্জীব রেড্ডির হাত থেকে পেয়েছেন রাষ্ট্রপতি পুরস্কার। এখনও সেই ছবি দেখে সেদিনের স্মৃতি মনে করতে থাকেন পুষ্পরাণী।
আরও পড়ুন- এক পা নিয়েই ১০০ কিলোমিটার! ৩১ লিটার জল বয়ে তারকেশ্বর যাত্রা গোবরডাঙার যুবকের
বাবার বাড়ি থেকেই তাঁর মাদুর বোনার হাতে খড়ি। দড়ির মাদুর বোনার চল বাবার বাড়িতে থাকলেও বিয়ের পর স্বামীর কাছ থেকেই শিখেছেন মাদুরের কাজ। দশটি হাত না থাকলেও হাতের দশ আঙুল যেন কথা বলত তাঁর।
পুষ্পরাণীর হাতে বোনা মাদুর এখন বিশ্বে সমাদৃত। মসলন্দ মাদুর এনে দিয়েছে রাষ্ট্রপতি পুরস্কার। পেয়েছেন একাধিক সম্মান। যখন মানুষের কাছে মেদিনীপুর যাওয়াও একটা বড় চিন্তার ছিল, তখনই তিনি দিল্লি গিয়ে রাষ্ট্রপতির হাত থেকে এনেছেন পুরস্কার। এখনও সযত্নে গুছিয়ে রেখেছেন তাঁর প্রাপ্তিগুলো। অভাবের সংসার, তবু যেন ভরে আছে অতীতের গরিমায়।
রঞ্জন চন্দ