বেশ কিছুদিন ধরে চুঁচুড়া চক বাজারে একটি ফার্নিচারের দোকানের সামনে আশ্রয় নিয়েছিলেন ষাটোর্ধ্ব বিমল বিশ্বাস। এক সময় গাড়ি চালাতেন থাকতেন হেমন্ত বসু কলোনির ভাড়া বাড়িতে। বয়সের কারণে এখন আর কাজ করতে পারেন না। বাড়ি ভাড়াও দিতে পারেননি। তাই নিরাশ্রয় হতে হয়। পথে পথে ঘুরে কোনওভাবে খাবার জোগার হলেও রাতে থাকবেন কোথায়? চকবাজারে একটি ফার্নিচারের দোকানে আশ্রয় চান। দোকান ব্যবসার জায়গায় বলে দোকানের ভিতরে থাকতে দিতে চাননি ব্যবসায়ী।
advertisement
তবে শীতের ঠান্ডার কোথায় যাবেন ভেবে দোকানের সামনে থাকতে দেন।দোকানি লক্ষীনারায়ণ ঘোষ বলেন, বেশ কিছুদিন ধরেই বিমল বাবুর সঙ্গে পরিচয়। হঠাৎ করে মাস দু’য়েক আগে এসে আমাকে বলে যে দোকানে থাকার ব্যবস্থা করে দিতে। কিন্তু ব্যবসায়িক জায়গা বলে আমি দোকানে থাকতে দিন। তবে আমার দোকানের সামনে বারান্দায় অনেকটা জায়গা আছে। সেখানেই কম্বল দিয়ে তাকে থাকার ব্যবস্থা করি।কিছুদিন আগে রাতের বেলায় এক যুবক বৃদ্ধকে বেধড়ক মারধর করে। যুবকের পরিচয় জানা যায়নি। তারপর থেকেই এই কালী মন্দিরে বৃদ্ধের আশ্রয় ছিল।পুলিশ কর্মী সুকুমার বাবু তার জন্য একটা থাকার ব্যবস্থা করেছেন এটা খুব ভাল কাজ। ব্যাগপত্র যা কিছু ছিল সব গুছিয়ে পুলিশ কর্মী বৃদ্ধকে তার বাইকে চাপিয়ে চুঁচুড়া হাসপাতাল-এর কাছে প্রতাপপুরে নবজীবনে নিয়ে যান।
শহরের গৃহহীন মানুষদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য চুঁচুড়া পুরসভার উদ্যোগে কয়েকদিন আগেই চালু হয় নবজীবন। চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের পুলিশ লাইনে কর্মরত কনস্টেবল সুকুমার উপাধ্যায় এর আগেও বহু মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। ভবঘুরে বা পরিবার থেকে বিতাড়িত এমন মানুষদের বাড়িতে ফেরার ব্যবস্থা করেছেন। বিমল বিশ্বাস এর যেহেতু কোনও বাড়িঘর নেই তার পরিবারের কেউ খোঁজ নেয় না। তাই তার জন্য নবজীবনে থাকার ব্যবস্থা করেন তিনি। কয়েকদিন আগেই চকবাজার কালী মন্দিরে বৃদ্ধকে শুয়ে থাকতে দেখেন সুকুমার।যেহেতু এই ধরনের মানুষের জন্য কাজ করেন।তাই নিজেই বিমল বিশ্বাস এর সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন তার ঘটনা।এরপর চুঁচুড়া পুরসভায় গিয়ে দেখা করে কথা বলেন। একজন গৃহহীন বৃদ্ধকে কীভাবে নবজীবনে আশ্রয় দেওয়া যায় সে বিষয়ে উদ্যোগ নেন।পুরসভার নির্দেশে আশ্রয় মেলে বৃদ্ধের।
আরও পড়ুন-ঘনিয়ে আসছে ভয়ঙ্কর বিপর্যয়…! ৮ রাজ্য কাঁপবে তুমুল ভারী ঝড়-বৃষ্টিতে! ধুলোঝড়ের তাণ্ডব, কী হবে বাংলায়? জানিয়ে দিল IMD
নতুন থাকার জায়গা পেয়ে বৃদ্ধ পুলিশ কর্মিকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছেন, তখন সুকুমারের চোখেও জল। দৃষ্টিহীন দম্পতির মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী মেয়েকে পরীক্ষা দিতে নিয়ে যাওয়াই হোক অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো কর্তব্য বলেই মনে করেন সুকুমার।পুলিশ কর্মী বলেন, নিজের যেটুকু ক্ষমতা সেটুকু দিয়েই মানুষের পাশে দাঁড়ালে কিছু মানুষের উপকার হয়। সবারই যদি কিছু কিছু চেষ্টা থাকে। সেটা তখন অনেক মানুষের কাজে লাগে।
রাহী হালদার