প্রাচীন কিন্তু সমসাময়িক। জমিদারি আজ লুপ্ত। ঘোষাল বাড়ির পাঁজরে লেপটে ক্ষয়। তবুও অটুট বাঁধন। নিয়ম নীতির বেড়াজালে দুর্গার উপাসনা। পাঁচশ তেষট্টি বছরের পুজোর প্রথায় কোনও নড়চড় নেই। জমিদারির জৌলুস নেই। এই পুজোর জাঁক আছে। তবে চারদিনের ঢাক নেই। বদলে আছে ঢোল-কাঁসর। কোন্নগরের ঘোষাল বাড়ির পুজো কিছুটা পারিবারিক, কিছুটা বারোয়ারি।
advertisement
সম্রাট আকবরের শাসনকালে জমিদারি পায় ঘোষালরা। আর পুজোতে ব্রিটিশ সরকার ৭৫০ টাকা করে দিত। হাওড়া ও হুগলির বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রজারা নিয়ে আসতেন কাঁচা আনাজ, মাছ ও নারকেল নিয়ে। জম্পেশ ভোজের আয়োজন হত ঠাকুর দালানে। প্রতিপদে চণ্ডীপাঠ, ঠাকুরের ভোগ। ষষ্ঠীতে বোধন। অষ্টমীতে সন্ধিপুজো। ঘোষাল বাড়ির পুজো চলছে এই নিয়মেই। দশমীর রাতে নয়, উমা বিসর্জন দেওয়া হয় দিনে। পান্তা-ইলিশ মাছ ভাজা খেয়ে মহিলারা যান বিসর্জনে। পুজোর মিষ্টি তৈরি হয় বাড়িতেই।
আরও পড়ুনঃ অগ্নিদেব-সুদীপার বাড়ির দুর্গাপুজো, সপ্তমীতে কেমন সাজলেন জুটিতে! দেখুন ছবিতে
ঘোষাল বাড়ির প্রতিমা একচালা। প্রতিমার বাহনেও সেই ব্রিটিশ আনুগত্যের প্রভাব। টানা চোখের ঘোড়াদাবা সিংহ। সবুজ রঙের অসুর। উলটো রথের দিন কাঠামো পুজো দিয়ে শুরু মূর্তি তৈরির কাজ। পাঁচপুরুষ ধরে পরম্পরার প্রতিমা বানাচ্ছেন মৃৎশিল্পী। পুজো তো প্রাণের। তাই বারবার ছুটে আসা। উৎসবের দিনে বাড়তি মাত্রা যোগ করে পারিবারিক অনুষ্ঠান। অষ্টমীর দিন নৃত্যনাট্য করবেন বাড়ির মহিলারা। ঠাকুরদালানের দুপুর এখন রিহার্সালে জমজমাট।
প্রজন্মের পর প্রজন্মের হাত ধরাধরিতে চলছে পুজো। হারায়নি ঐতিহ্য। স্মৃতির জাল বুনেছে ঘোষাল বাড়ি। ঠাকুরদালানে কথা বলে ইতিহাস। সাদা-কালোর জাল ছিঁড়ে রঙিন হয়ে ওঠে পুজোর ধুমধাম। বারোয়ারি পুজোর পাশাপাশি এই বাড়ির পুজো দেখতেও ভিড়।
Abir Ghoshal