রাজার ভালবাসায় এলাকায় দস্যুবৃত্তি করে একসময় রাজাকে অতিষ্ঠ করে তোলা দস্যু দলপতি, রাজার সৈন্য দলে অংশ নিয়ে রাজাকেই রক্ষা করেছে এমন উদাহরণও হয়তো হাতে গোনা। আবার সেই দস্যু দলপতির নামে গ্রাম তথা গড় তৈরি করে দেওয়ার উদাহরণ আছে কি?
নারায়ণগড়ের পাল রাজবংশ অনেক প্রাচীন। শুরু হয়েছিল বাংলার ৬৭১ সনে। ইংরেজির ১২৬৩-৬৪। তখন বাংলায় অরাজক পরিস্থিতি। খয়রা, মিজি দস্যুজাতির ভয়ে তটস্থ এলাকার মানুষ। মুহুর্মুহু ঘটত চুরি, ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা। মনে করা হয় সেই সময়ে, নারায়ণগড়ে পাল বংশের প্রতিষ্ঠা হয়। গন্ধর্ব পাল যার প্রতিষ্ঠাতা। সে সময় খয়রা ও মিজি নামে দস্যু জাতি দস্যুবৃত্তি করেই তাদের জীবিকা চালাত।
advertisement
গবেষকেরা মনে করেন, শিকার প্রিয়, দস্যুজাতি খয়রাজাতি নারায়ণগড় রাজার যত্নে ও ভালবাসায় দস্যুবৃত্তি ছেড়ে রাজার সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিল। গন্ধর্ব পালের পুত্র নারায়ণবল্লভের নামে পরে নাকি ‘নারায়ণগড়’ নাম হয়েছে। এমনটাই মত প্রকাশ করেছেন অনেক গবেষক। তাঁর পুত্র দেবীবল্লভের (বাংলা ৭২০-৭৩৬) কাজ স্মরণীয়। তিনি অত্যন্ত ভালবাসতেন খয়রাজাতিদের। আমোদপ্রিয় দেবীবল্লভ নারায়ণগড় থেকে দুই, তিন ক্রোশ দুরে জঙ্গলাকীর্ণ একটি মনোরম স্থানে গড়বাড়ি নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। নাম দেন বিনয়গড়।
আরও পড়ুন: মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে বড় বদল, খুচরো সবজি বিক্রেতাদের জন্য কড়া নির্দেশ! না মানলে আইনি ব্যবস্থা
সেখানে ছিল হাওয়ামহল, আস্তাবল, বারদুয়ারি। পরের দিকে এসব হয়েছে। ইতিহাসবিদরা মনে করেন দস্যু দলপতি বিনায়কের নামে নামাঙ্কিত হয় এই গড়বাড়ি। বিনয়গড়ে ছিল পাল রাজাদের প্রমোদ ভবন। এখনও সুরম্য, কারুকার্য খচিত সেই ভবনের ধ্বংসাবশেষ দেখা যায়। বিস্মিত হতে হয় এর ভেতরের পরিকল্পনা ও কারুকাজ দেখে। প্রায় দেড় হাজার বিঘা ভূমি এই গড়ের অন্তর্ভুক্ত ছিল। খয়রাজাতিরা এখানে বসবাস, পশু শিকার ও চাষ আবাদেও যুক্ত হয়। পাশেই বৃহৎ ঝিল ছিল। যার বাঁধ রণবাঁধ নামে পরিচিত। উষর ভূমি উর্বর করা হয়েছিল।
পাল বংশের শেষ রাজা পৃথ্বীবল্লভের সময়ে বিনয়গড়ের অনেকটা শ্রীবৃদ্ধি ঘটে। নতুন করে, মনের মতো সাজিয়ে ছিলেন তিনি। সেই শ্রী রাজার মৃত্যুর পর ধ্বংসের দিকে হেঁটেছে। একটা সময় এখানে একটি আমোদপ্রমোদের ভবন, আস্তাবল, বারদুয়ারি, শান বাঁধানো পুকুর-সহ একাধিক স্থাপত্য ও স্থান ছিল। এখন সবটাই ভগ্নপ্রায়। স্থানীয়দের দাবি প্রশাসন এই জায়গার উন্নতি করে পর্যটকদের আসা এবং ইতিহাসক্ষেত্র হিসেবে উন্মুক্ত করুক। যাতে আগামী দিনে এই গড়বাড়ি সংরক্ষিত হয়ে সকলের কাছে ঘোরার একটি জায়গা হিসেবে গড়ে ওঠে।
রঞ্জন চন্দ