রাজা লক্ষণ সেন গৌর সাম্রাজ্য থেকে পালিয়ে এসে আত্মগোপন করেছিলেন এই জঙ্গলে। তিনিই প্রথম দুর্গাপুজো শুরু করেন এই গভীর জঙ্গলে। জঙ্গলের ভেতরে গড়ে তোলেন শ্যামারূপা দেবীর মন্দির। এই মন্দিরে সিদ্ধিলাভের আশায় কাপালিকের আনাগোনা শুরু হয়। লক্ষ্মণ সেনের সভাকবি ছিলেন কবি জয়দেব। তিনি দেবীকে শ্যাম রূপে দর্শন করেন। তারপর থেকেই দেবী দুর্গার নামকরণ হয় শ্যামারূপা।
advertisement
আরও পড়ুন : পুরোহিতের আসনে এবার অন্য কেউ বসবেন! পুজোয় এমন দৃশ্য, যা মনে থাকবে বহুদিন
লক্ষ্মণ সেন জঙ্গল ছেড়ে গৌরে ফিরে যাওয়ার সময় মন্দিরের দায়িত্ব দেন সেনাপতি ঢেকুরের সামন্ত রাজা ইছাই ঘোষকে। ইছাই ঘোষ এই মন্দিরে সাধনা করে সিদ্ধিলাভ করেন। উনিই প্রথম ষোড়শ উপাচারে দুর্গাপুজো করেন। কথিত আছে, বাংলায় প্রথম দুর্গাপুজোর সূচনা হয় এভাবেই। কথিত আছ, একবার দেবীর আদেশ লঙ্ঘন করে ইছাই ঘোষ অষ্টমীর সন্ধিক্ষণে যুদ্ধে যান এবং পরাজিত ও নিহত হন। এরপর ইছাই ঘোষের সহচররা দেবী মূর্তি বিসর্জন দিয়ে দেন। পরে স্থানীয়রা শ্বেত পাথরের মূর্তি স্থাপন করে দেবীর পুজো শুরু করেন।
আরও পড়ুন : তিন পুরুষের ঐতিহ্য এবার বিদেশে! বাঁকুড়ার জগন্নাথপুরের ডাক দিয়ে সাজছে আমেরিকার দুর্গা প্রতিমা
এখানে প্রতিদিন হয় নিত্যসেবা। তবে দুর্গাপুজোর সময় দেশ বিদেশ থেকে ভক্তরা আসেন। সেজে ওঠে জঙ্গল। অন্নকূটের ব্যবস্থা থাকে প্রতিদিনই। অষ্টমীর সন্ধিক্ষণে অলৌকিক গর্জনে কেঁপে ওঠে গোটা এলাকা। অষ্টমীতে ওই সময় শোনা যায় তোপধ্বনি। অষ্টমীর দিন কোথা থেকে আসে তোপধ্বনি, কয়েকশো বছরের পুরনো এই পুজোর সেই রহস্য আজও ভেদ হয়নি। যদিও অনেকেই সে রহস্যভেদ করার চেষ্টায় সন্ধিপুজোর সময় ভিড় করেন এই মন্দিরে। তবে উত্তর আজও অজানা।
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
পশ্চিম বর্ধমান জেলার প্রত্নতত্ত্ববিদ প্রণব ভট্টাচার্য জানান, সেন বংশ ওই গড়ে বসবাস করতেন। সেই বিষয়ে এবং ইচ্ছাই ঘোষেরও অনেক নিদর্শন এখানে মিলেছে। এই মন্দিরের ইতিহাস ঘাটলে জানা যায় এর বয়স। তাই এখানেই প্রথম দুর্গাপুজো হত বলে মনে করা হয়। শহরের ঝাঁ চকচকে আলো আর থিমের পুজোর ভিড়কে টেক্কা দেয় এখানকার পুজো। ইতিহাসের সঙ্গে নিজেদের একাত্ম করে তুলতে অনেকেরই দুর্গাপুজোর সময় গন্তব্য হয়ে ওঠে কাঁকসার গড় জঙ্গলের এই শ্যামরূপা মন্দির।