রাজপুর সোনারপুর পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা প্রদ্যুৎ দে৷ ছোটবেলা থেকেই মাঠ তাঁকে টানত ৷ ধারাবাহিকভাবে স্কুলের খেলাধুলোয় প্রথম স্থান অধিকার করা ছিল তারা বাঁধা ৷ তাই স্কুলেরই শিক্ষক হরিপদ দেবনাথ তাঁকে একপ্রকার জোর করে পাঠান রবীন্দ্র সরোবর স্টেডিয়ামে, অ্যাথলেটিক্স প্র্যাকটিশের জন্য ৷
তাঁর দক্ষতা দেখে তাঁকে সাইতে ট্রেনিং করতে পাঠানো হয় ৷ ২০০৩ সাল থেকে সাইতে শুরু হয় তাঁর প্র্যাকটিশ ৷ নিজের দক্ষতাতেই ২০০৫ সালে মহমেডান স্পোর্টিং ক্লাবের অ্যাথলেটিক্স বিভাগে ডাক পান ৷ ২০০৭ সালে সুযোগ পান ইস্টবেঙ্গলে ৷ ২০১০ সাল পর্যন্ত চুটিয়ে একাধিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন ও পুরস্কার পান ৷
advertisement
২০১১ সালে হঠাৎই জীবনে নেমে আসে বিপর্যয় ৷ একসঙ্গে বাবা ও মায়ের শারীরিক অসুস্থতার কারণে মাঠ ছেড়ে দিতে হয় তাঁকে ৷ বেসরকারি সংস্থায় কোনওরকমে একটি চাকরি জোগাড় করে সংসারের হাল ধরেন তিনি ৷ এরইমধ্যে তার জীবনে আসেন স্ত্রী পিঙ্কি দে ৷ তিনিও খেলাধুলো পাগল ৷ সুযোগ পেলে তিনিও মাঠে আসেন ৷ বছর খানেকের মধ্যেই তাঁদের কোল আলো করে আসে কন্যাসন্তান ৷
তারপর হঠাৎ করে আসা কোভিড সবার জীবনেই কিছুটা অনিশ্চিয়তা এনে দেয় ৷ এরই মধ্যে তিন বছরের মেয়েকে নিয়ে মাঠে যাওয়া শুরু করেন ৷ ফের নতুন জীবন শুরু হয় তার ৷ আবার শুরু হয় প্র্যাকটিস ৷ বয়স বেড়ে যাওয়ায় বেশি বয়সের খেলায় যোগদান করেন ৷ মাঠে নেমেই ২১ সালে চেন্নাইতে আয়োজিত অল ইণ্ডিয়া স্টেট মিটে ৩টি গোল্ড পান ৷ ২২ সালে কলকাতায় আয়োজিত স্টেট মিটে ৩৫ বছর বয়সী অ্যাথলেটিক্স বিভাগে যোগ দিয়ে ফের পান সোনা ৷ ২৩ সালে বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে আয়োজিত ইন্টারন্যাশনাল মিটেও ৩টি বিভাগে সোনা জেতেন তিনি ৷ ২৪ সালে পুনেতে আয়োজিত ন্যাশনাল গেমসেও সোনা পান ৷ নিজের খেলার পাশাপাশি ছোটদের তৈরি করতে NS-NIS থেকে কোচের ট্রেনিং নেন প্রদ্যুৎ ৷
কোচের ট্রেনিং নেওয়ার পর ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে তৈরি করতে রোজ ভোর হলেই নেমে পড়েন মাঠে ৷ আপাতত ১২ জন খুদেকে সম্পুর্ণ বিনা পারিশ্রমিকে ট্রেনিং করাচ্ছেন তিনি ৷ তার এই কাজে তার পাশে রয়েছেন তার স্ত্রীও ৷ তার আশা এরাই একদিন দেশের মুখ উজ্বল করবে ৷
Suman Saha