এই অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ কৃষিকাজের উপর নির্ভরশীল। ধানই তাঁদের প্রধান ফসল এবং বছরের সিংহভাগ আয়ের উৎস। কয়েক মাস আগেই কৃষকেরা জমিতে ধানের বীজ বুনেছিলেন। কিন্তু আকস্মিক বন্যার জলে তা ভেসে যায়। এরপর বাইরে থেকে নতুন করে ধানের চারা এনে আবার রোপণ করেছিলেন তাঁরা। চাষের মাঠ সবুজে ভরে উঠতে নতুন আশায় বুক বাঁধছিলেন কৃষকরা। ভেবেছিলেন এবার হয়তো ক্ষতি পুষিয়ে নিয়ে পরিবার চালাতে পারবেন। কিন্তু আবারও বড় বিপর্যয় নেমে এল।
advertisement
আরও পড়ুন: চেন্নাইয়ে কাজে গিয়ে দীর্ঘদিন নিখোঁজ পরিযায়ী শ্রমিক! সন্দেহে স্থানীয় ঠিকাদারের ভূমিকা
কিন্তু সুবর্ণরেখার বাড়ন্ত জল ফের সমস্ত স্বপ্ন ভাসিয়ে নিয়ে গেল। ক্ষেতের ধানের চারা নিমেষে জলের নিচে তলিয়ে গেল। সারা বছরের রোজগারের পথ কার্যত বন্ধ হয়ে গেল তাঁদের। গ্রামের বহু কৃষক জানান, চাষ করার জন্য তাঁদের ধার-দেনা করতে হয়েছে। কেউ মহাজনের কাছ থেকে, কেউ আবার ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে ধানের বীজ, সার ও কীটনাশক কিনেছিলেন। এখন ফসল হারিয়ে তাঁদের সামনে ঋণ শোধ করা তো দূরের কথা, সংসার চালানোই বড় চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চাষের জমি ডুবে যাওয়ায় এলাকায় চরম অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। কেউ কেউ হতাশ হয়ে পড়ছেন, আবার কেউ পরিবারের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রাত জেগে কাটাচ্ছেন। মহিলাদের বক্তব্য, ঘরে চাল নেই, গরু-ছাগলের খাবার নেই, শিশুদের জন্য খাবার জোগাড় করতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে। পানীয় জলের সঙ্কট দেখা দিয়েছে বহু গ্রামে।
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা নিয়মিত পরিদর্শনে এলেও কৃষকদের দাবি, শুধু খোঁজখবর নেওয়ায় কোনও লাভ নেই। প্রয়োজন ক্ষতিপূরণ ও সরাসরি সাহায্য। কারণ একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগে কৃষিজীবীরা সম্পূর্ণরূপে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। তাঁদের কথায়—আমরা চাষ করে খাই, কিন্তু এখন চাষই আমাদের পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এবারের বন্যা শুধু ঘরবাড়ি নয়, পূর্ব মেদিনীপুরের কৃষকদের সারা বছরের রুটি-রুজি আর স্বপ্নকেও ভাসিয়ে নিয়ে গেল।