প্রজাদের জল কষ্ট দূর করার জন্য বর্ধমানের রাজারা তিনটি সায়র খনন করেন তার মধ্যে অন্যতম এই কৃষ্ণসায়র। রাজ উপাধি লাভ করার আগে ১৬৬৫ সালে জমিদারি সামলাছিলেন কৃষ্ণ রাম রায় তখনই প্রজাদের জলকষ্ট দূর করতে খনন করা হয় এই সায়রটি।
আরও পড়ুন: ফলে লাগানো ‘ফরমালিন’ দূর করার সঠিক কায়দা জানেন…? তুড়িতে দূর করুন! শিখে নিন ‘টোটকা’
advertisement
বর্ধমানের রাজ পরিবার ছিলেন প্রথমে এক ব্যাবসায়ী পরিবার পরে জমিদারী লাভ করেন তারা এবং জমিদারি ধীরে ধীরে বড় হওয়ায় পরবর্তীতে মুঘলদের কাছ থেকে রাজা উপাধি লাভ করেন। বর্ধমান জমিদার পরিবারের বংশধর কৃষ্ণরাম রায় ১৬৬৫ সাল থেকে তিনি বর্ধমানের জমিদারি সামলাচ্ছিলেন। মূলত সেই সময় বর্ধমান শহর ছিল কাঞ্চননগর কেন্দ্রিক। বর্তমান বর্ধমান শহর তখনও তৈরি হয়ে ওঠেনি। সেই সময় বর্ধমান রাজবাড়িও ছিল কাঞ্চননগর এলাকাতেই।
গোলাপবাগ ও আশেপাশের এলাকায় অল্প সংখ্যক মানুষ বসবাস করতেন সেই সময় তাদের জল কষ্ট দূর করতেই এই জমিদার কৃষ্ণ রাম রায় এই সায়র খনন করেন বলে জানা যায়। ইতিহাসবিদ সর্বজিৎ যশ বলেন, কৃষ্ণ রাম রায়ের সঙ্গে যুদ্ধ চলছিল পাশাপাশি বিভিন্ন জমিদার রাজাদের সঙ্গে। সেই রকমই এক রাজা ছিলেন মেদিনীপুরের চিতুয়াবরদার রাজা শোভা সিংহ। তাঁর সঙ্গে বেশ কিছু কাল ধরে একটানা যুদ্ধ চলেছিল এবং সেই যুদ্ধেই চন্দ্রকোনায় নিহত হন কৃষ্ণ রাম রায়।
বাবার মৃত্যুর পরে ছেলে জগত রাম রায় বর্ধমান ছেড়ে ঢাকায় চলে যান এবং ১৬৯৬ থেকে ১৬৯৮ সেখানেই ছিলেন তিনি । পরে ফিরে এসে পৈত্রিক জমিদারি সামলানোর চেষ্টা করেন কিন্তু শোভা সিংহের ভাই হিম্মত সিংহের ষড়যন্ত্রে ১৭০২ সালে কৃষ্ণ রাম রায়ের খনন করানো এই কৃষ্ণসায়রের পাড়েই স্নানরত অবস্থায় ছুরির আঘাতে মৃত্যু হয় তৎকালীন জমিদার জগত রাম রায়ের।
পরবর্তী কালে পিতা জগত রাম রায়ের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে হিম্মত সিংহকে হত্যা করেন পুত্র কীর্তি চাঁদ রায়। পিতার হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার আনন্দে বর্ধমানের কাঞ্চননগড়ের যে প্রাসাদ ছিল তার চারিদিকে গড়ে তোলেন ১২টি গেট। যার নাম দেওয়া হয় বারোদুয়ারী গেট, কিন্তু বর্তমানে একটি গেট রয়েছে।
বর্ধমানের কৃষ্ণসায়র আজও এক রুদ্ধশ্বাস ইতিহাসের ধারক ও বাহক। বর্তমানে কৃষ্ণসায়রকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে কৃষ্ণসায়র পার্ক। কিন্তু সায়রের শান্ত প্রকৃতি এবং বর্তমানের মনোরম পার্ক পরিবেশের আড়ালে লুকিয়ে আছে বর্ধমানের তৎকালীন শাসক কৃষ্ণরাম রায় প্রজাপ্রিয়তা ও জগৎ রাম রায়ের এক আত্মত্যাগের কাহিনী।
সায়নী সরকার





