শহরে যেখানে পাকা বাড়ি ও বিদ্যুতের আলো স্বাভাবিক বিষয়, সেখানে শেখ আশরাফের ঘরে আজও বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। সন্ধ্যা নামলেই তাঁকে ভরসা করতে হয় কেরোসিনের বাতির উপর। দিনমজুরের কাজ করে যা সামান্য আয় হয়, তাতেই কোনওমতে একবেলা দু’মুঠো চাল জোটে। কাজ না থাকলে উপবাসই তাঁর নিয়তি।
দারিদ্র্যের কারণে ১৫ বছর আগে স্ত্রী ছেলে-মেয়েকে নিয়ে বাপের বাড়ি চলে গিয়েছেন বলে জানান আশরাফ। তাঁর আক্ষেপ, ঘর করার সামর্থ্য ছিল না বলেই ওরা চলে গেল।
advertisement
আরও পড়ুন: বড় গাছ ছোট রূপে! হরেকরকম বাইসাইয়ের বড় চমক সিউড়ির মেলায়, দাম শুনলে চোখ কপালে উঠবে
এই বিষয়ে তিনি আরও বলেন, “পৌরসভায় অনেকবার জানিয়েছি কিন্তু এখনও বাড়ি পাই নি। বাড়ি করতে না পারার কারণেই আমার বউ, ছেলে-মেয়ে চলে গেছে। খুবই আতঙ্কের মধ্যেই এই ঘরে আমি কষ্ট করে কোনওরকমে দিন কাটায়।” পূর্ব বর্ধমানের গুসকরার সমাজসেবী স্থানীয় বাসিন্দা পাঞ্জাব শেখ সম্প্রতি আশরাফকে শীতের পোশাক ও কিছু খাবার দিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, “ওঁর ঘরে ঢুকে চমকে গিয়েছিলাম। এত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে একজন মানুষ কীভাবে বেঁচে আছেন, ভাবতেই কষ্ট হয়। আমরা শহরে থেকেও এই বাস্তবতা বুঝতে পারিনি।”
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
আশরাফ শেখ যে ঘরে বসবাস করেন সেই ঘর যেকোনও মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে। অত্যন্ত ভয়াবহ পরিস্থিতে তিনি ঝুঁকিপূর্ণ ভাবেই বসবাস করছেন। এক স্থানীয় বাসিন্দা আনসুরা বিবি বলেন, “আমরা সবই দেখতে পাই, সত্যিই আশরাফ ভাই খুব কষ্ট করেই থাকে। আমরাও চাই যেন ওর একটা ঘর হয়।” যদিও এ বিষয়ে গুসকরা পুরসভার চেয়ারম্যান কুশল মুখোপাধ্যায় জানান, ২০১৯ সাল পর্যন্ত আবাস প্রকল্পের কাজ প্রায় সম্পন্ন হয়েছিল এবং নতুন করে আবার শুরু হচ্ছে। তিনি বলেন, “প্রকৃত প্রাপ্যরা যাতে বঞ্চিত না হন, সে বিষয়ে কাউন্সিলরদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে শেখ আশরাফের বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। তিনি পুরসভায় এলে গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে।” সারাজীবন দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে আজ ক্লান্ত শেখ আশরাফ। শহরের রঙিন আলোর ঝলকানির আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকা এই মানুষটি যেন গুসকরার ‘প্রদীপের নীচে অন্ধকার’-এর জীবন্ত প্রতীক। এখন দেখার, প্রশাসনের সহানুভূতি ও উদ্যোগে তাঁর জীবনে আদৌ কোনও আলো আসে কি না।





