রাজ্যজুড়ে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা নিয়ে একের পর এক বিতর্কের মাঝেই এমন চিত্র ধরা পড়েছে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের কাঠুরিয়া গ্রামে। গ্রামের একপ্রান্তে থাকা নীল-সাদা বাড়ির দেওয়ালে গায়ে কিছু দিন আগেও লেখা ছিল, ‘বাংলার আবাস যোজনা’ (পিএমএওয়াই আইডি: ডব্লুবি১৬৮৫৩৩২)। এই বাড়িটি বাংলার (প্রধানমন্ত্রী) আবাস যোজনা প্রকল্পে ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে শঙ্কর মাঝিকে দেওয়া হয়েছিল।
advertisement
আরও পড়ুন: দুর্নীতি বরদাস্ত নয়, অভিযোগ উঠতেই একদিনে গ্রেফতার শাসকদলের ৩ নেতা
তবে তৈরির পর থেকেই তা তৃণমূলের দখলে ছিল বলে অভিযোগ। ২০১৯ সালে এই বিষয়ে প্রশাসনিক স্তরে অভিযোগ হতেই তদন্ত শুরু হয়। প্রাথমিক তদন্তের পর সেই বাড়ি যে শঙ্কর মাঝিরই তা সামনে আসে। এরপর ঘটা করে সেই বাড়ি পঞ্চায়েত প্রধান ও উপপ্রধানের উপস্থিতিতে শঙ্কর মাঝিকে তুলে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে বাড়ি সামনে পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে প্রকল্পের ও উপভোক্তার নাম দেওয়ালে লিখেও দেওয়া হয়।
সেখান থেকে কিছুটা দূরে দামোদরের বাঁধ লাগোয়া সেচ দফতরের জায়গাতেও একই আইডি নম্বর দেওয়া অ্যাসবেস্টসের আচ্ছাদন দেওয়া এক চিলতে ঘর থাকায় বিতর্ক শুরু হয়েছে। পাকা বাড়ি কী ভাবে আবাস যোজনায় অ্যাসবেস্টাসের ঘরে রূপান্তরিত হল তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সেচ দফতরের জায়গাতে সরকারি প্রকল্পে ব্যক্তির বাড়ি কী করে হয় প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েও।
আরও পড়ুন: বাগদানের পর আন্তিলিয়াতে গ্র্যান্ড সেলিব্রেশন, ফুল বিছিয়ে স্বাগত জানানো হল অনন্ত-রাধিকাকে
যদিও জামালপুর ২ নং গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান উদয় দাস জানান, শঙ্কর মাঝিকে এই নীলসাদা বাড়িটিই দেওয়া হয়েছিল। এরপর আবার কী করে সেখানে তৃণমূল অফিস হল বা কী করেই বা বাঁধের ধারে সরকারি আবাস যোজনার বাড়ি হল তা জানা নেই। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় ঘর তৈরির জন্যে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা আর্থিক অনুদান পেয়েছিলেন শঙ্কর মাঝি। তারপর অক্ষাংশ-দ্রাঘিমাংশ দিয়ে ঘর তৈরির সময় শঙ্করকে সামনে রেখে ছবিও আপলোড করা হয়েছিল।
অভিযোগ, সরকারি অনুদানে তৈরি বাড়িটি প্রথম দিন থেকেই তৃণমূলের দখলে রয়েছে। সেই বাড়ির নাম রাখা হয়েছে উন্নয়ন ভবন। ঘরের ভেতর এসি,এলইডি টিভি, মুখ্যমন্ত্রীর ছবিও রয়েছে। এলাকায় এই ঘর তৃণমূলের কার্যালয় বলে পরিচিত। আবাস যোজনা নিয়ে দুর্নীতির এই অভিযোগ উঠতেই বাঁধের ধারে শঙ্কর মাঝিকে অ্যাসবেস্টসের চাল দেওয়া একটি ঘর তৈরি করে দেওয়া হয়। সেচ দফতরের জায়গার ওপর থাকা ওই ঘরের দেওয়ালে আবার বাংলা আবাস যোজনা থেকে বাড়িটি তৈরি বলে লিখে দেওয়া হয়। নিয়ম হল, উপভোক্তার নিজের জায়গাতেই আবাস যোজনার বাড়ি হবে। শঙ্কর মাঝি গত হয়েছেন। তাঁর এক আত্মীয়ের দাবি, শঙ্কর মাঝির নামে সরকারি ঘর এলেও সেই ঘরে এখন তৃণমূলের পার্টি অফিস করা হয়েছে। বদলে বাঁধের ধারে একটি ঘর করে দেওয়া হয়েছে।
জামালপুরের বিডিও শুভঙ্কর মজুমদার বলেন, 'কোন দাগ নম্বরে আবাস যোজনার বাড়িটি এসেছিল তা খতিয়ে দেখার পরই বিস্তারিত বলা যাবে।স্থানীয় তৃণমূল নেতা রামরঞ্জন সাঁতরা বলেন, এটা আমাদেরই অফিস। তার যাবতীয় নথি আমাদের কাছে আছে। বাঁধের বাড়ি নিয়ে পঞ্চায়েতই ভাল বলতে পারবে।'