বর্তমানে যখন ১৮ বছর বয়সের তরুণরা নিজেদের কেরিয়ার সহ নানা রঙিন স্বপ্নে বিভোর, সেখানে স্বরূপের স্বপ্নগুলো একটু অন্যরকম। তাঁর কাছে নিজের সুখের চেয়ে অন্যের হাসি বেশি দামি। সেই জন্য নিজের দাদুর স্মৃতিকে পাথেয় করে বর্ধমানের এই তরুণ আজ অনেকের কাছেই এক আশার আলো।
advertisement
বর্ধমানের নীলপুর এলাকার বাসিন্দা স্বরূপ দাস। বর্ধমান বিদ্যার্থী বয়েজ স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র সে। তাঁর এক হাতে বই খাতা, অন্য হাতে দায়বদ্ধতা। ছোটবেলায় বাবা-মায়ের সঙ্গে মেলায় গিয়ে মেলার বাইরে থাকা কিছু অসহায় মানুষদের দেখে তাঁর মন কেঁদে উঠেছিল। তখন থেকেই তাঁদের জন্য কিছু করবে বলে ঠিক করেছিল। সেদিন থেকে ধীরে ধীরে নিজের হাতখরচ থেকে টাকা জমানো শুরু করে সে। ২০২২ সালের ২৫ ডিসেম্বর ৫০০ জনের হাতে চকোলেট ও কেক তুলে দেওয়ার মাধ্যমে তাঁর অন্যের মুখে হাসি ফোটানো শুরু। তারপর থেকে একের পর এক কাজ করে চলেছে স্বরূপ। কখনও পুজোর আগে নতুন শাড়ি দিয়ে মায়েদের পাশে থাকা, কখনও বৃদ্ধাশ্রমে বয়স্ক মানুষের পাশে দাঁড়ানো, কখনও আবার শীতে কম্বল দিয়ে অসহায় মানুষদের মুখে হাসি ফোটানো।
বয়সে ছোট হলেও এই কিশোরের লক্ষ্যটা অনেক বড়। ইতিমধ্যেই সে গড়ে তুলেছে একটি ফাউন্ডেশন। নিজের দাদুর নামে ফাউন্ডেশনের নাম দিয়েছে। শুরু থেকেই নিজের হাতখরচ বাঁচিয়ে এইসব কাজ করেছে সে। ভবিষ্যতেও এভাবেই কাজ করতে চায়। কারণ নিজের দাদুর নামে কোনও টাকা দিতে চায় না স্বরূপ।
তাঁর কথায়, আগে যখন মেলায় যেতাম দেখতাম অনেক বয়স্ক দাদু, ঠাকুমা ও বাচ্চারা মেলায় অসহায় হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।মনে হত, তাঁরা সমাজের কাছে অবহেলিত। তখন থেকে ঠিক করি তাঁদের জন্য কিছু করব। আমার ছোট বয়সে আমার দাদু মারা যান। আমি দাদুর জন্য কিছু করতে পারিনি, ওই বয়স্ক মানুষগুলোর মধ্যেই আমি আমার দাদুকে খুঁজে পাই।
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
ছেলের এই কাজে গর্বিত স্বরূপের মা। পড়াশোনার পাশাপাশি ছেলে যেন আরও এগিয়ে গিয়ে এভাবেই মানুষ পাশে থাকতে পারে, সেটাই চান তিনি। বইখাতার ভার আর সামাজিক দায়বদ্ধতা উভয়কেই সমানতালে সামলাচ্ছে দ্বাদশ শ্রেণির এই ছাত্র। নিজের হাতখরচ বাঁচিয়ে যেভাবে সে তিল তিল জমিয়ে অন্যের মুখে হাসি ফোটাচ্ছে, তা বর্তমানে অনেকের কাছে অনুপ্রেরণা।





